নেশার ফাঁদ থেকে মুক্তির আধ্যাত্মিক চিকিৎসা


"You'll never know a thing without learning it from someone else."----- Unknown 

যে কোন প্রকার সমস্যা অথবা ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসার উপাই হচ্ছে সেই ফাঁদটিকে বিশ্লেষণ করা, জানা এবং  বোঝা। ভেতর এবং বাইরে থেকে যে কোন সমস্যার কারন ধরতে পারলে, এর থেকে বের হওয়া সহজ হয়। মাদক যেহেতু শরীর, মন,  আত্মাকে একই সাথে আক্রমণ করে এবং অন্ধকারের  কালো চাদরে আচ্ছন্ন করে রাখে।  তাই নেশার অন্ধকার  থেকে মুক্ত হতে  একটি আত্মিক বা আধ্যাত্মিক আলোর  দরকার পড়ে। মাদকের কবল থেকে সাময়িক মুক্তি যে কোন ভাবে সম্ভব তবে   স্থায়ীভাবে মুক্ত হতে হলে আত্মার বা আধ্যাত্মিকতার পথের কোন বিকল্প নাই। 

কারন আধ্যাত্মিকতার  পথ হচ্ছে -  আলোর পথ, চীরতরে নেশার জগতকে বিদায় জানানোর পথ,  সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবনের পথ।  এখানে নেশার ফাঁদ থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু আধ্যাত্মিক চিকিৎসার কথা বলবো, যেগুলো   প্রয়োগ করে ইতিহাসে হাজার হাজার মানুষ মুক্তি পেয়েছে এবং আমি নিজে  নেশার কবল থেকে মুক্ত হতে পেরেছি;  আশাকরি আপনিও পারবেনবরাবরের মত এবারও আমরা একটা সমস্যাকে সমাধানের জন্য তিন দিক থেকে আক্রমণ করবো – শরীর মন এবং আত্মাকে পৃথকভাবে মনোযোগ এবং সময় দেব।  মনে রাখবেন এই লড়াইতে আপনাকে জিততেই হবে। এই লড়াই অসুস্থতার বিরুদ্ধে সুস্বাস্থ্যের লড়াই ,  অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর লড়াই , শয়তানের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই।  







শরীরের চিকিৎসাঃ 

 স্রষ্টা আমাদের শরীরটাকে এমনভাবে তৈরি করেছে যে , এর যে কোন অঙ্গের ক্ষতি হলে নিজেই নিজেকে মেরামত করে নিতে পারে । নেশা দ্রব্য গ্রহনের ফলে রক্ত, ফুসফুস, লিভার ইত্যাদি অঙ্গে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য প্রথমেই শরীরকে সাহায্য করতে হবে।  পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে , কৃত্রিম ভাজা-পোড়া খাবার কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখতে হবে এতে করে শরীর দ্রুত মেরামত করার সুযোগ পাবে। বেশি বেশি ডাবের পানি অথবা লেবু পানি পান করতে হবে তাতে দেহ থেকে দুষিত পদার্থ দ্রুত বের হয়ে যাবে। দেশি ফল , সবজি এবং লঘুপ্রাচ্য খাবার যা সহজে হজম হয় এমন খাবার বেশি  খেতে হবে। সেই সাথে দিনে দুই তিনবার গোসল করতে হবে , এতে শরীর সতেজ এবং সচেতন হয়ে উঠবে। তাজা বিশুদ্ধ অক্সিজেনের জন্য দিনে কমপক্ষে পাঁচবার বুক ভোরে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে হবে। তবে  যে কোন প্রকার ড্রাগ নেশা দ্রব্য ছাড়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন কারন ড্রাগ ছাড়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যাকে withdrawal syndrome বলে অর্থাৎ  আপনি নেশা ছাড়তে চাইলেও,  নেশা আপনাকে কিছুতেই ছাড়বে না। এই withdrawal syndrome এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

শরীর সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন শরীরের ভেতর এবং বাইরের রহস্য 



মনের চিকিৎসাঃ

"Take a look at your priorities and your values. Spend major time with major influences and minor time with minor influences." — Jim Rohn

কৈশোর এবং যৌবনের বয়সের একজন মানুষের প্রায় সমস্ত আবেগগুলো জুড়ে থাকে বন্ধু এবং প্রেম।  তাই মাদক শুরুর কারন এগুলোর মাঝে আছে কিনা খুঁজে বের করতে হবে।   এদের মধ্যে  যেসব বন্ধু বা বান্ধবী  আপনাকে নেশার জগতের সাথে পরিচিত করে দিয়েছিল, যারা এখন সঙ্গ দেয় এবং  যারা যোগান দেয় তাদের সবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে! নতুন ভাল সঙ্গ তৈরি করতে হবে সম্ভব না হলে কিছুদিনের জন্য শহর বদলে অন্য শহরে যেতে হবে। কাজটা অনেক কঠিন মনে হলেও, বাঁচতে হলে,  আপনাকে এরকমটাই  করতে হবে। 

মনে আছে প্রথম যখন নেশার বস্তু আপনার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল তখন আপনার শরীর এটা প্রত্যাখ্যান করেছিল। তীব্র ঘৃণায় , গা গুলানো যন্ত্রণা হয়েছিল। শরীরের প্রতিটি অনুপরমানু আর চায় না বলে চিৎকার করছিল। তার মানে প্রকৃত পক্ষেই এগুলো আমাদের শরীর এবং মনের জন্য ভাল ছিল না। কিন্তু যে বা যাদের মাধ্যমে এগুলো খাওয়ার দাওয়াত পেয়েছিলেন তারা এগুলোর গুনাগুন ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আপনার সামনে উপস্থাপন করেছিল। ইনজয়, ফিলিংস , বাজ ইত্যাদি নানান চমকপ্রদ শব্দ দিয়ে আপনাকে উত্তেজিত করেছিল । আপনাকে তাদের দরকার কারন  আপনি  তাদের কোন এক পরিকল্পনার অংশ , ব্যাকআপ প্লান,  বিপদের দিনে ড্রাগের যোগানদাতা, কিংবা শুধু বিনোদনের খোরাকএখন সময় এসেছে সেইসব কুলাঙ্গার বন্ধুদের অগ্রাহ্য করার এই নেশার  দুনিয়া আপনি যথেষ্ট দেখেফেলেছে , এর ভেতর এবং বাইরের সবকিছু বুঝে ফেলেছেন , এর শেষ পরিনতি কি তার দু চারটা নমুনাও ইতিমধ্যে জেনেছেন। আর কত?

 এবার তাদের সবাইকে না বলুন।   জীবনের লক্ষ্য গুলোকে পুনরায় সাজান আপনি ইতিমধ্যে জেনে গেছেন “সব মানুষ এক না , সব মানুষ মানুষ না।“ প্রেমে ছ্যাঁকা অথবা বন্ধুদের উস্কানি;  যে কারনেই আপনি নেশার জগতে প্রবেশ করেন না কেন,  সব মানুষ বা বন্ধু আপনার কল্যাণ কামনা করে না। যারা নেশা করতে বলে  তারা আর যাই হোক, আপনার বন্ধু না। বন্ধু কখনও নেশার জগতের  দিকে ডাকবে না।  আপনি যদি এখনই সতর্ক না হন , তবে আপনাকে একই শিক্ষা আরও বেশি মূল্য দিয়ে , আরও বেশি সম্পদ,  সময় এবং স্বাস্থ্য ক্ষয় করে শিখতে হবে। তখনও যদি নেশার করালগ্রাস থেকে বের হয়ে না আসতে পারেন। তবে ইতিহাসের পাতায় আপনি  অন্যের জন্য শিক্ষার উপকরন হয়ে থাকবেন। প্রচুর ঘৃণা, ধিক্কার সাথে নিয়ে কবরে চলে যাবেন। তাই সুস্থভাবে  বেঁচে থাকতে হলে আপনার  বন্ধুর পরিবর্তন করতেই হবে।  

মন সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে পড়ুন মনের ভেতর এবং বাইরের রহস্য  



আত্মা ঃ

 আমি কোরআনে এমন বস্তু নাজিল করেছি, যা মুমিনদের জন্য নিরাময় ও রহমত।” (সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ৮২)

 আমরা কেন নেশা করি আর্টিকেলে বলেছিলাম “ আমরা এসেছি বেহেশত থেকে, কিছু মানুষের ভেতরে বেহেশতের  সুখের আবেশ এখনও থেকে গেছে। বিশেষ করে যারা নেশার জগতের মধ্যে ঢুঁকে পড়ে তাদের মধ্যে বেহেশত কমপ্লেক্স বেশি পরিমানে থাকে। তাদের কাছে দৈনন্দিন জীবনের কাজ অনেক কঠিন বলে মনে হয়! চাওয়া মাত্র সবকিছু হাজির হয়ে যাবে , এই সুখ স্বপ্নের মধ্যে তাদের সারাদিন কেটে যায়। তারা সুখের এইসব ভাবনা  থেকে বের হয়ে আসতে  পারে না। তারা নেশা করে বার বার সেই সুখের স্মৃতি গুলোকে তাজা রাখতে চায়। যেহেতু নেশা কেটে যাওয়ার সাথে সাথে সুখ স্বপ্নগুলোও ঝাপসা হতে থাকে আর  মেজাজও সেই সাথে বিগড়াতে থাকে। মাদকদ্রব্য তাকে  কল্পনার জগতে থাকতে সাহায্য করে

 এখন তাদের বুঝতে হবে  যেহেতু আমরা  এখন বেহেশতে নাই, পৃথিবীতে আছি তাই পৃথিবীর নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। বাস্তবতাকে বুঝতে হবে বাস্তবতাকে ধারন করতে হবে এবং বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে বেহেশতে যাওয়ার মত উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।

দুনিয়ার বাস্তবতা হচ্ছে,  পৃথিবীকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে,  এটা আপনার হৃদয়কে সবসময় ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে থাকবে। আপনি যে এতো যত্ন করে মাদক গ্রহন করছেন , এই মাদকও একসময় আপনার হৃদয়,  শরীর, মন, আত্মা , সম্পর্ক  সবকিছু তছনছ করে দেবে।  তাই সময়  থাকতে প্রস্তুত থাকতে হবে, শত দুঃখ কষ্টের  মধ্যে থেকে ভবিষ্যতে আসল বেহেশতে যাওয়ার জন্য উপকরণ সংগ্রহ করে নিতে হবে। পৃথিবীতে নয়;  বেহেশতকে বেহেশতের জাইগাই যেয়েই উপভোগ করতে হবে। এখন জেনে নেই কিভাবে পরকালে বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে এবং  সেইসাথে মুক্তি পাওয়া যাবে নেশার কবল থেকে।   

আত্মা সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে পড়ুন আত্মার ভেতর এবং বাইরের রহস্য 


রোজাঃ 

 আগুন যেমন কাঠকে খেয়ে ফেলে তেমনি রোজা শরীরের কোষের দুষিত অংশকে  খেয়ে ফেলে । জাপানি বিজ্ঞানি ইউসনারি ওসুমি। রোজার এই বিস্ময়কর তথ্যটি আবিস্কার করে ২০১৬ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন । ড্রাগের দুষিত পদার্থগুলোকে ধ্বংস করার জন্য আমরা স্বাস্থ্যকর এই অভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারি।  একদিন পর পর অথবা সপ্তাহে ২ দিন অথবা মাসে তিন দিন রোজা রাখতে পারি; নির্ভর করবে শরীরে দুষিত পদার্থের মাত্রা কত পরিমানে আছে তার উপর। শরীরকে মাদক মুক্ত করতে এবং আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত করতে হাজার হাজার বছরের এই কার্যকর পদ্ধতির চর্চা করুন , উপকার পাবেন নিশ্চিত। 


কাপিংঃ

শরীরের যেসব অংশে নড়াচড়া কম হয় সেইসব অংশে দুষিত রক্ত জমা হয়। শরীরকে বিষমুক্ত করতে হলে এইসব অংশ থেকে দুষিত রক্ত বের করে দিতে হবে। এতে শরীর অনেকাংশে হালকা হয়ে যাবেবাংলাদেশে এখন অনেক জাইগাই এই  কাপিং চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে একটু  খোঁজ নিলেই খুঁজে পেয়ে যাবেন ঠিকানা।

বেত্রাঘাতঃ

শুনতে  আজিব শোনালেও বিজ্ঞানের অনেক বড় রহস্য লুকিয়ে আছে এই বেত্রাঘাতে। ক্রমাগত নেশাদ্রব্য গ্রহনের ফলে আমাদের  অনুভূতিগুলো  ধিরে ধিরে অসাড় এবং অকেজো হয়ে পড়ে! সুখ, দুঃখ , আবেগ , অনুভূতিগুলো আর আগের মত সংবেদনশীল থাকে না।  একটা সময়ে  পৃথিবীর কোনকিছুই আর নেশাগ্রস্থ ব্যাক্তিকে স্পর্শ করে না, সমস্ত পৃথিবী ধ্বংস  হয়ে গেলেও তাদের কিছু আসে যায় না শুধু নেশাদ্রব্যের যোগান থাকলে তাদের আর কিছু চায় না। 

এসব মানুষদের বেত্রাঘাত করে রাশিয়ান বিজ্ঞানী Chukhrova অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেছেন। দেখা গেছে প্রচলিত চিকিৎসায় যেসব মাদকসেবীর কোন পরিবর্তন হয় না, কিছুদিন ভাল থাকার পর পুনরায় যাদের নেশার অভ্যাস ফিরে আসে তাদের  বেত্রাঘাতের চিকিৎসা অনেক ভাল কাজ করে। বিজ্ঞানী Chukhrova প্রমান করে দেখিয়েছেন নেশার প্রকোপ অনুযায়ী ৩ থেকে ১০ টি সেশনে  ১০-৬০ টি বেত্রাঘাত করলে রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করে। বেতের আঘাত যখন করা হয় তখন এদের শরীরে অ্যান্ডরফিন নামক সুখের  হরমোন নিঃসৃত হয়। রোগী পুনরায় নিজের হারানো  অনুভূতিগুলোকে অনুভব করতে শুরু করে এবং নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে ফেলে। 

বিস্তারিত জানতে এই লিংক থেকে ঘুরে আসতে পারেন।  

http://siberiantimes.com/other/others/features/beating-addiction-out-of-you-literally/

এইতো গেল বিজ্ঞানের দিক ------- ইসলামের ইতিহাসে বেতের আঘাতের চিকিৎসা শত শত বছর ধরে প্রচলিত আছে এবং  এই বেতের আঘাত খেয়ে কত শত মানুষ ভাল হয়ে গেছে। বেতের আঘাত খেয়ে মানুষ সুস্থ হয়ে উঠার অন্যতম কারন হচ্ছে এর মাধ্যমে মানুষ জীবনে গতি লাভ করে। আপনি যদি শুধু একবার মানুষকে বেগে উঠিয়ে দিতে পারেন তখন নিজেই নিজেকে নিরাময় করতে পারবে।

If you just set people in motion they'll heal themselves. ~Gabrielle Roth

ঘোড়াকে চাবুক মারলে যেমন তার বেগ বেড়ে যায় , তেমনি মানুষকে চাবুক মারলেও তার বেগ বেড়ে যাবে। তখন সে নিজেই নিজের নিরাময়ের দায়িত্বভার গ্রহন করবে। 
The purpose of psychology is to give us a completely different idea of the things we know best. ~Paul Valéry, Tel Quel

দোয়া ঃ 

দোয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজেদের ব্রেনের প্রোগ্রাম করি! সুস্থ সুন্দরের কামনা করি,  ভাল বিষয়ের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করিতাই আপনি নিজের এবং  আপনার  নেশাগ্রস্থ ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন ।

কি দোয়া করবেন ?
 অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি তার অর্থ, সন্তান ও বয়স বেশি করে দিন আর তাকে ক্ষমা করুন এবং তাকে যে রিজিক দিয়েছেন তাতে বরকত দিন (সিলসিলা সহিহা)

কেন দোয়া করবেন? 
উম্মু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ভাই এর অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া  করে, তার জন্য একজন নিয়োজিত ফিরিশতা আমীন বলতে থাকে এবং বলে, তোমার জন্যও অনুরূপ (সহীহ মুসলিম)
অর্থাৎ অন্যের জন্য দোয়া করলে আপনার নিশ্চিত লাভ হবে , কারন ফেরেশতা আপনার জন্য দোয়া করবে। 

বর্তমানে অনেক গবেষণায় নিজের এবং অন্যের কল্যাণে  দোয়ার কার্যকারিতার নিশ্চিত প্রমান পাওয়া গেছে। তাই নিজের এবং অন্যের কল্যাণে বেশি বেশি দোয়া করুন ।    হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার জন্য দোয়ার দ্বার খোলা হয়েছে (অর্থাৎ যার দোয়া করার তাওফিক হয়েছে), তার জন্য রহমতের দ্বার খোলা হয়েছে আল্লাহর কাছে যেসব দোয়া চাওয়া হয়, তন্মধ্যে তাঁর কাছে সর্বাধিক পছন্দীয় হলো আফিয়াত; অর্থাৎ নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের জন্য দোয়া করা’ (জামে তিরমিজি, খণ্ড: হাদিস নম্বর: ৩৫৪৮)

হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ব্যতীত অন্য কোনো বস্তু তাকদিরের লিখনকে ফেরাতে পারে না এবং নেক আমল ছাড়া অন্য কোনো বস্তু হায়াত বৃদ্ধি করতে পারে না’ (তিরমিজি, খণ্ড: , পৃষ্ঠা: ৪৪৮, হাদিস নম্বর: ২১৩৯) তিনি আরও বলেন, ‘তাকদিরের ফয়সালাকে কেবল দোয়াই পরিবর্তন করতে পারে



জিকির ঃ  

একবার নেশার জগতে প্রবেশ করলে চারপাশ থেকে গাড় অন্ধকার ঘিরে ধরে। শরীর মন আত্মার উপর এই বিষের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। শরীর এবং মনের চিকিৎসার পাশাপাশি তাই আত্মার চিকিৎসাও জরুরী হয়ে পড়ে । আত্মার চিকিৎসার জন্য জিকির সবচেয়ে উত্তম পন্থা। কারন এইটা সহজে পালন করা যায়, যে কোন অবস্থায় আওড়ানো যায়, মুখে না উচ্চারন করেও জিকিরের মাধ্যমে স্রষ্টার সাথে সংযুক্ত থাকা যায়।
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়, জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়। (সূরা রাদ : আয়াত ১৮)। 
  প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে কাইয়ুম রহিঃ জিকিরের উপকারিতা বিষয়ে লেখা “আল অয়াবিলুস সায়িব” বইতে উল্লেখ করেছেন – “জিকির হচ্ছে সব রোগের চিকিৎসা । জিকিরের কারনে সকল কষ্টদায়ক কাজ সহজসাধ্য হয়ে যায় । সকল বালা-মুসিবত দূর হয়ে যায়।“
আপনি নেশাগ্রস্থ হয়েছেন বলে নিরাশ হবার কিংবা হীনমন্যতায় ভোগার কোন কারন নাই। মানুষ আপনাকে নেশাখোর , বাবা খোর , গাঁজাখোর, হিরইঞ্চি ইত্যাদি নাম দেবে , আপনার কোন ডাকেই হয়তো মানুষ সাড়া দেবে না। কিন্তু বিশ্বাস করুন আল্লাহ আপনাকে কখনই খালিহাতে ফেরত দেবে না, তাকে ডাকলে সাড়া পাবেন নিশ্চিত।
আমাকে যে ডাকে আমি তার ডাকেই সাড়া দেই, যখনি সে ডাকেআল-বাক্বারাহ ১৮৬

কোরআন শ্রবণঃ
কোয়ান্টাম মেথডের প্রবক্তা শহীদ আল বোখারি মহাজাতক একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করেছেন
তিনি বলেন , আমেরিকার একদল স্বেচ্ছাসেবীকে কোরআন তেলাওয়াত শোনানোর পর দেখা যায়, এদের ৯৭% এর মধ্যেই প্রশান্তির প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। ইইজি পরীক্ষায় দেখা গেছে,  কোরআন শুনতে শুনতেই তাদের ব্রেন ওয়েভ আলফা লেভেলে নেমে গেছে যা শরীর এবং মনের গভীর প্রশান্ত অবস্থাকে বোঝায়।

 
এদের অনেকেই আরবি বুঝতো না  কিন্তু তা সত্ত্বেও কোরআন শ্রবণ তাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে এক প্রশান্ত পরিতৃপ্তি। আর একথা এখন সর্বজনবিদিত যে টেনশন উদ্বেগ উৎকণ্ঠাই মানবদেহের ৭৫% রোগসৃষ্টির কারণ। স্নায়বিক উত্তেজনা এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয় এবং দেহ নানারোগে আক্রান্ত হয়। আর কোরআন শ্রবণের মাধ্যমে দেহে এর উল্টো প্রভাব সৃষ্টি হয়। এখানেই কোরআনের নিরাময় রহস্য। এজন্যেই নবী করিম (স) বলেছেন, যারা মসজিদে সমবেত হয়ে কোরআন পাঠ এবং আলোচনায় অংশ নেয় তাদের ওপর শান্তি ও ক্ষমা বর্ষিত হবে, তাদেরকে ঘিরে থাকবে ফেরেশতাগণ এবং আল্লাহ বলবেন তারা তো তাঁর পাশেই আছে।                                                                

ড. আহমেদ আল কাজি আমেরিকায় একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। আরবি বলতে পারেন না বা বোঝেন না এমন কিছু আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবীদের তিনি তিনটি গ্রুপে ভাগ করেন। প্রথম গ্রুপকে কোরআন তেলাওয়াত শোনানো হলো। দ্বিতীয় গ্রুপকে দৈনন্দিন আরবি ভাষার কিছু বাক্য পড়ে শোনানো হলো এবং তৃতীয় গ্রুপকে কোনোকিছু না শুনিয়ে শুধু একটা শান্ত নিরিবিলি জায়গায় রিল্যাক্স করতে বলা হলো। এরপর ড. কাজি তিন গ্রুপেরই ব্লাড প্রেশার, ইইজি, হার্টরেট, পেশীর সংকোচন-প্রসারণ এবং ঘেমে যাওয়ার প্রবণতা পরীক্ষা করেন। তিনি দেখেন বাকি দুই গ্রুপের তুলনায় প্রথম গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে প্রশান্তির প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি।
এছাড়াও পাকিস্তানের একটি হৃদরোগ হাসপাতালে https://www.youtube.com/watch?v=mEJuDkyhhtg
 ইনটেনসিভ কেয়ারে থাকা রোগীদের কোরআন তেলাওয়াত শোনানো হয়, এতে রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করে। এইটা এখন সবরকম পরীক্ষায় সফল হয়েছে। আশাকরি শরীর, মন অথবা আত্মার যে কোন রোগী এই থেকে উপকার লাভ করবেন।  

যে কোন প্রকার নেশার কবল থেকে মুক্ত হয়ে আসা কঠিন। নেশা ছাড়াগেলেও সৎসঙ্গের অভাবে পুনরায় এই নেশা ফিরে ফিরে আসে। নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়লে আপনি এই সৎসঙ্গের মানুষ পেয়ে যাবেন। জীবন নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন এবার আর নিজের জন্য নয় অন্যের জন্য বাঁচুন , অন্য মানুষের সেবা করুন, চিন্তা ভাবনা করে বের করুন অন্য মানুষের কি কি সমস্যার সমাধান করা যায়। যখন আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে বের হয়ে আসবে , অন্যের জন্য কাজ করবেন তখন আর নেশা সেভাবে আপনাকে কষ্ট দিতে পারবে না , আপনি দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন, সুন্দর ঘুম দিতে পারবেন । আপনার জন্য  আমার তরফ থেকে দোয়া থাকলো
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি তার অর্থ, সন্তান ও বয়স বেশি করে দিন আর তাকে ক্ষমা করুন এবং তাকে যে রিজিক দিয়েছেন তাতে বরকত দিন (সিলসিলা সহিহা)



Comments

Popular Post

আত্মার ভেতর এবং বাইরের রহস্য

মাদক, ড্রাগ, নেশা- সর্বনাশা