ডায়াবেটিকস হওয়ার উপকারিতা


“Just open your eyes and remove the sadness. There is a blessing in everything, waiting to be set free by your faith.” --- Unknown
 ডায়াবেটিকস নামটা শুনলেই অজানা এক আতংক মনকে আচ্ছন্ন করেকিন্তু আমরা জানি পৃথিবীর কোন কিছুই সম্পূর্ণ ক্ষতিকর কিংবা সম্পূর্ণ উপকারি নয়। সবকিছুর ভেতরেই ভাল এবং মন্দ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। আমরা সাধারন ভাবে সেই বিষয়গুলোই গ্রহন করি যেগুলোর ভাল দিক গুলো বেশি । এবং সেই বিষয় গুলো এড়িয়ে চলি যেগুলোর মন্দ দিক  বেশি। ডায়াবেটিকস এরও ভাল এবং মন্দ দিক আছে । যদিও  ডায়াবেটিকসকে কেউ নিমন্ত্রন করে নিয়ে আসে না , ডায়াবেটিকস চলে আসে জিনগত বৈশিষ্ট্য এবং জীবন-যাপনের ভুল পদ্ধতির কারনেতাই ডায়াবেটিকসে একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে একে সহ্য করে নিতে হয় , একে মোকাবেলার জ্ঞান অর্জন করতে হয়, আমৃত্যু এর সাথে বসবাস করতে হয়! তাই ডায়াবেটিকস এর উপকারিতাগুলোকে খুঁজে বের করতে পারলে , এর সাথে জীবনযাপন করা অনেক সহজ হয়। আমরা এখানে ডায়াবেটিকস এর উপকারি দিকগুলো খুঁজে বেরকরার চেষ্টা করেছি। আশা করি  এই তথ্যগুলো জানার পর ডায়াবেটিকস এর সাথে বসবাস করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।



তবে দয়া করে পার্থক্যটি  বোঝার চেষ্টা করবেন-  শুধু মুখে বলা ডায়াবেটিকস হওয়া ভাল আর ডায়াবেটিকসের সাথে বসবাস করার পর ডায়াবেটিকস  হওয়া  ভাল। এই দুই অবস্থার মাঝে প্রায় আকাশ পাতালের ব্যবধান। আসুন তাহলে আমরা খুঁজে দেখি ডায়াবেটিকস হওয়ার পর কি কি ভাবে আপনি লাভবান হয়েছেন।

পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের চাওয়া পাওয়ার গ্লাস  অর্ধেক ভর্তি থাকে নয়তো অর্ধেক খালি থাকে। জীবিত কোন মানুষই  সব দিক থেকে পূর্ণ হয় না। আবার জীবনের প্রতিটি ব্যর্থতা এবং অর্জনকে অর্ধেক খালি কিংবা অর্ধেক ভর্তি হিসেবে দেখা যায়। ডায়াবেটিক এর ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য , যেহেতু ডায়াবেটিক এর সাথে বসবাস  করাই লাগে সেহেতু ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে এই রোগটাকে দেখলে যেমন অনেকটা সহনীয় বলে মনে হয়,  তেমনি এটাকে নিয়ন্ত্রন করাও সহজ হয়। 
১। ডায়াবেটিকস হলে নিয়ম শৃঙ্খলার গুরুত্ব বুঝতে পারবেনঃ
ডাক্তার  কখনও সেরা ডাক্তার হয়ে উঠতে পারবে না;  যদি না সে ডাক্তার হয়ে উঠার সব নিয়ম কানুনগুলো মেনে চলে। গাড়ী রাস্তায় চলতে পারবে না, যদি না নিদিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে গাড়ীর যন্ত্রাংশ গুলো জোড়া দেয়া হয়। এই পৃথিবী আমাদের কবেই ধংস হয়ে যেতে যদি সে নিয়মকানুন না মেনে সূর্যের চারপাশে ঘুরতো। অনুপরমানু থেকে শুরু করে মহাকাশ পর্যন্ত কোথাই নেই নিয়ম-কানুন? তবে পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যে নিয়মকানুন নে মেনে বেঁচে থাকতে পারে। আর নিয়ম-কানুন না মানার কারনেই মানুষ সবচেয়ে বেশি  অসুখ, দুর্ঘটনা , ক্ষতির সম্মুখীন হয়।  
আপনি যদি জীবনকে পূর্ণ উপভোগ করতে চান, সুস্বাস্থ্যের সুখ চান তবে অবশ্যই আপনাকে নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলেতে হবে ,  ডাক্তারের উপদেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।শুধু ডায়াবেটিকস হলেই যে আপনাকে নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতে হয় তা কিন্তু নয়। আপনি যে কোন জাইগায় উচ্চাসনে উঠতে চাইলে , সম্মান , প্রতিপত্তি চাইলে আপনাকে নিয়ম মেনে চলার দক্ষতা অর্জন করতেই হবে তাই সুস্বাস্থ্যের উচ্চাসনে উঠতে হলে , স্বাস্থ্যের সুখ নিতে হলে নিয়ম মেনে চলতেই হবে। ডায়াবেটিকস এ আক্রান্ত হলে নিয়ম-কানুন মেনে চলার গুরুত্ব এবং উপকারিতা  আপনি আপনার শরীর, মন আত্মা দিয়ে  অনুভব করতে পারবেন।  



২। নিজেকে জানতে এবং বুঝতে পারবেনঃ
Socrates said, "The unexamined  life is not worth living." গুরু দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন  “পর্যবেক্ষণহীন জীবন মানে মূলহীনভাবে বেঁচে থাকা ” কারন পর্যবেক্ষণ বিষয়টি না থাকলে সেই জীবন সস্তা  হয়ে যাবে।  শুধুমাত্র ডায়াবেটিকসের কল্যাণে কিভাবে জীবন আরও মূল্যবান হয়ে উঠবে এবং ডায়াবেটিকস কিভাবে আপনাকে  পর্যবেক্ষণ বিষয়টি সুন্দরভাবে শিখিয়ে দেবে, দেখুন ! 

·        যখন আপনি দ্রুত ধৈর্য হারিয়ে ফেলবেন,তখন বুঝে নেবেন রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে গেছে।
·       যখন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে দুর্বল অনুভব করবেন, পায়ে ব্যাথা  অনুভব করবেন তখন বুঝে নেবন রক্তে গ্লুকোজের পরিমান কমে গেছে।
·       যখন মাঝ রাতে বউ কে জাগিয়ে দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করবেন  কিভাবে দুনিয়ার সব সমস্যা সমাধান করা যাবে তখন বুঝবেন গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে হয়েছে ৩০
ডায়াবেটিকস রোগী ছাড়া আর কে আছে যে নিজেকে এতো ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে , নিজের প্রতিটি অনুভূতির কার্যকারণ এবং ফলাফল বুঝতে পারে?  
টাইপ-২ ডায়াবেটিকস এ আক্রান্ত  একজন মানুষের অভিজ্ঞতা শুনুন- “আমরা  কখনই অসচেতন ভাবে  খাওয়া দাওয়া করি না , ফলে শরীরে বাড়তি মেদও জমা হয় না। আমরা জানি কখন খেতে হবে , কতটুকু খেতে হবে এবং কখন খাওয়া থামাতে হবে। আমরা যে কোন মানুষের চেয়ে দেহের ভেতরের  সাংকেতিক ভাষা ভাল ভাবে বুঝতে পারি।“ 
ডায়াবেটিকস এ আক্রান্ত  আর এক জনের পর্যবেক্ষণ!
“আমি এখন ডাক্তারের চেয়েও খুব ভাল বুঝতে পারি কিভাবে কড়া মিষ্টি দেয়া এক কাপ কফি আমার রক্তের গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়, কিভাবে সেই গ্লুকোজ হরমোন পরিবরতন করে , কিভাবে সেই হরমোন মনের ইচ্ছাকে প্রভাবিত করে এবং সবশেষে কিভাবে সেই ইচ্ছাগুলো  আমাকে অন্যান্য কাজে উদ্বুদ্ধ করে।“  

একমাত্র ডায়াবেটিকস এ আক্রান্ত রুগীরাই এই রকম মহামূল্য অন্তর্দৃষ্টির দেখা পায়!   

৩। ডায়াবেটিকস আপনাকে ব্যায়াম করার একটা বাহানা তৈরি করে দেবে ঃ
আমরা সবাই জানি ব্যায়ামের শত  শত উপকারিতার কথা। পেপার পত্রিকা  থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া সবকিছুতে ব্যায়ামের নানাবিধ উপকারের কথা লিখে চলে! কিন্তু কজন মানুষ ধারাবাহিক ভাবে ব্যায়াম করতে পারে? ডায়াবেটিকস রোগীরা শুধু ব্যায়ামই করে না , তারা বিরতিহীনভাবে ভাবে এগুলো অনুশীলন করে যায় জীবনভর
টাইপ-১ ডায়াবেটিকস এ আক্রান্ত একজন মানুষের ব্যায়ামের অভিজ্ঞতা শুনুন।“ ব্যায়ামের প্রতিটি পদক্ষেপে আমি নিজেকে শক্তিশালী অনুভব করি। মনে হয় যেন ডায়াবেটিকসের জটিলতাগুলোকে   লাথি দিয়ে বিদায় করছি।“  তারা ব্যায়ামের   ফল হাতে নাতে লাভ করে , তারা  দেখতে পায় কি সুন্দরভাবে  গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রনে থাকছে। হয়তো এই কারনেই ব্যামের মত কঠোর সাধনাকে অনায়াসে আয়ত্ত করতে পারে।  

 ৪। ডাক্তারের হাত সুঁই দেখে আর ভয় লাগবে না 

মনে আছে  ছোট বেলায় ডাক্তারের হাতে ইঞ্জেক্সনের সিরিঞ্জ দেখার  ভয়ঙ্কর সব  অভিজ্ঞতার কথা? বিশ্বাস করুন ডায়াবেটিকস এ আক্রান্ত হবার পর সেই ইঞ্জেক্সনের ভয় আর একটুও থাকবে না আপনার!  
চিত্রঃ ইনজেকশন দেয়া নিয়ে ডাক্তার এবং নার্সদের সাথে সমঝোতা চলছে
৫। সামাজিকতা রক্ষার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি ঃ
যারা সামাজিক অনুষ্ঠান গুলোতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, সুযোগ পেলেই এড়িয়ে যান তাদের জন্য চরম আশীর্বাদ এই ডায়াবেটিকস। এই রোগের দোহায় দিয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান গুলো থেকে আপনি অনায়াসে পার পেয়ে যেতে পারবেন
৬। নতুন ব্যবসার সম্ভাবনাঃ
হা আপনি ঠিকই শুনেছেন ডায়াবেটিকসের মাঝেও ব্যবসা লুকিয়ে আছেডায়াবেটিকসের সাথে বসবাস আপনাকে বিশেষজ্ঞ করে তুলবে। যা আপনাকে নতুন কোন আইডিয়ার জোগান দেবে। কিন্তু যার ডায়াবেটিকস নাই তাদের মাথায়  এসব ব্যবসায়িক আইডিয়া খেলা করবে না। অনেক মানুষ নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবং  ব্যবসায় বুদ্ধি প্রয়োগ  করে নিত্যনতুন পণ্য বানিয়েছেন , কিংবা নতুন সেবা চালু করেছেন যেমনঃ গ্লুকোজ ফ্রি ট্যাবলেট , ভেষজ লতাগুল্ম, বড়দের ডায়াপার , রক্ত পরীক্ষার যন্ত্রপাতি আমদানি এবং বিক্রয় ইত্যাদি। আপনিও ডায়াবেটিকস এর কোন নতুন ওষুধ আবিস্কার করতে পারেন অথবা নতুন কোন সেবা দিতে পারেন।  আপনার ব্যবসার নতুন নাম দিতে পারেন “চিনি টাকা বা রক্ত টাকা বা মিষ্টিময় জীবন ” যে নামই দেন না কেন এই ব্যবসায় আপনি নিশ্চিত লাভবান হবেন কারন দিন দিন ডায়াবেটিকস এ আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা বাড়ছে বৈ কমছে না  
৭। পুষ্টিকর খাবার সুস্থ শরীরঃ
কোন কোন  খাবার গুলো স্বাস্থ্যের জন্য সত্যি ভাল আপনি গবেষণা আর পর্যবেক্ষণ করতে করতে বুঝে যাবেন। ডায়াবেটিকস আপনাকে এক প্রকার বাধ্য করবে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খুঁজে বের করতে । শক্তিশালী রাডারের মত ডায়াবেটিকস আপনাকে পুষ্টিকর খাবারের সন্ধান দেবে! 
৮। সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের সাথে দ্রুত বন্ধুত্ব হবেঃ
ডায়াবেটিকস একটি বিশাল প্লাটফর্মের মত। যেখানে প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে । তাই আপনি কখনও নিজেকে একা অনুভব করবেন না , নিজেকে অসহায় মনে করবেন না। চেনা নেয় জানা নেই এমন একজন ডায়াবেটিকস রোগীকেও আপনার আপন মনে হবে , আপনি কথা বলার হাজারটা বিষয় পেয়ে যাবেন । আপনার ভয়, আইডিয়া, খাবার, খাবার তৈরির রেসিপি ইত্যাদি নানা টপিকস নিয়ে কথা বলতে পারবেন এবং বন্ধু বানিয়ে ফেলতে পারবেন। এখন অনলাইনে অনেক ফোরাম আছে, ফেসবুক পেজ আছে যাদের সাথে যুক্ত হয়ে আপনি আপনার আইডিয়াগুলো সেয়ার করতে পারবেন এবং অন্যের আইডিয়া গুলো জেনে কাজে লাগাতে পারবেন।
৯। ডায়াবেটিকস আপনাকে সৃজনশীল করবেঃ
স্রষ্টার কাজ হচ্ছে সৃষ্টি করা, আর মানুষকে বলা হয়েছে স্রষ্টার রঙে রঙ্গিন হতে মানে সৃষ্টিশীল হতে। গ্লুকোজ লেভেল ঠিক রাখার জন্য আমাকে কি কি খেতে হবে? কিভাবে ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনে ব্যায়ামের জন্য সময় বের করবো? হাজারো নিয়ম কানুন মেনে কিভাবে আমি আমার অন্তরের সুখ ধরে রাখবো? এতো কঠিন রোগ হওয়া সত্ত্বেও আমি বেঁচে আছি , আমি কি স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি? কি কি উপায়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি,  মানুষের উপকার করতে পারি? ডায়াবেটিকস রোগীর  এইসব আবশ্যিক প্রশ্নের উত্তর খুজেতে খুঁজতে  সে সহজেই সৃজনশীল মানুষ হয়ে উঠে! কারন যে কোন কঠিন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে প্রচুর সৃজনশীলতার দরকার হয়।

১০। চ্যালেঞ্জ গ্রহনে প্রেরণা দেবেঃ
আমাদের প্রত্যেকের জীবন কিন্তু চ্যালেঞ্জিং , সব অঙ্গ প্রতাঙ্গ রোগ বালাই মুক্ত থাকার পরও জীবন চ্যালেঞ্জিং এবং কঠিন! ডায়াবেটিকসটাকেও জীবনের আর সব চ্যালেঞ্জের সাথে মিশিয়ে দিন, নইলে এটা বাড়তি ঝামেলা তৈরি করবে। একবার নিয়ম-শৃঙ্খলাকে আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারলে ডায়াবেটিকস হবে আপনার অন্যতম প্রেরনার উৎস । আপনার সব চেষ্টা , সাধনা, আত্মনিয়ন্তনের জন্য একদিন আপনি গর্ব অনুভব করবেন।

১১। নিজেকে নতুন করে ভালবাসার কারন খুঁজে দেয় ডায়াবেটিকসঃ 
বর্তমানে  হাজারো ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলা অনেক সহজ ! কারন সবাই আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য ফাঁদ পেতে রেখেছে পরিবার থেকে শুরু করে দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এই তালিকায় আছে। নিজের প্রাণশক্তি এদের সবাইকে বিলাতে গিয়ে নিজের জন্য আর মনোযোগ প্রাণশক্তি অবশিষ্ট থাকে না। ডায়াবেটিকস আপনাকে সেই সুযোগটি করে দেয় , অনায়াসে আপনি না বলতে পারবেন। বেঁচে যাওয়া সময় টুকুতে নিজের প্রতি মনযোগী হতে পারবেন, নিজেকে ভালবাসতে পারবেন।   
১২। ডায়াবেটিকস আপনাকে স্বাস্থ্যবান করেঃ  
শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটা সত্য! আপনি ডায়াবেটিকস এ আক্রান্ত হয়েছেন মানেই আপনাকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে, নিয়মিতি সব স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা লাগবে। এতে করে আপনার সুস্থ এবং স্বাস্থ্যবান থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়াও ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করা লাগবে, ধূমপান সহ যাবতীয় বদভ্যাস ছাড়া লাগবে , ওজন ঠিকঠাক রাখা লাগবে। এইসব ইতিবাচক অভ্যাসের চর্চা মানুষকে স্বাস্থ্যবান হতে সাহায্য করে থাকে। শুধু আপনি নন আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্যের চর্চা বেড়ে যাবে, স্বাস্থ্য সম্পর্কে তারা আরও সচেতন হবে এবং জীবনের সবকিছুতে ভারসাম্যপূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করবে।    
১৩। আপনি হবেন আপনার ভাগ্যের নিয়ন্ত্রকঃ
 “ভাগ্য আমাদের তৈরি করে- না আমরা ভাগ্য তৈরি করি?” সৃষ্টির শুরু থেকে চলতে থাকা এই বিতর্ক আপনার কাছে অর্থহীন মনে হবে। ডায়াবেটিকস হওয়ার পর থেকে আপনি নিজেই  বুঝতে পারবেন পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার, শরীর চর্চা, আধ্যাত্মিকতার চর্চা , বদভ্যাস দূর করে সুঅভ্যাস চর্চা আপনার জীবনে কতটা প্রভাব ফেলছে; সুতরাং বিতর্ক অর্থহীন। 




১৪ জীবনকে আরও  ভালবাসতে শিখবেনঃ
আমরা জেনে এবং না জেনে ক্ষতিকর অনেক অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ি । যেমন ধূমপান , ব্যায়াম না করে আলস জীবন যাপন করা, রাত জেগে কথা বলে চ্যাট করা,  ক্ষতিকর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ইত্যাদি । আপনার যখন ডায়াবেটিকস হবে তখন আপনি মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখতে পাবেন, জীবন কত ক্ষুদ্র বুঝতে পারবেন, প্রাণশক্তি দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে দেখতে পাবেন।  তাই আপনার অযথা এবং  কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় নষ্ট করতে চাইবেন না। আপনি বুঝতে পারবেন আপনি পৃথিবীর সব কিছু ভোগ করতে পারবেন না, সব সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবার ভালবাসা পাবেন না। তখন শুধু বেছে বেছে সেই কাজগুলোই করবেন যে কাজগুলো আপনার কাছে অর্থপূর্ণ হবে , সুদূর প্রসারি ফলাফল বয়ে নিয়ে আসবে এবং নিজেকে এবং কাছের গুটিকয়েক মানুষকে ভালবাসতে শেখাবে।  
১৫। ডায়াবেটিকস আপনাকে জ্ঞানী বানিয়ে দেবেঃ
যদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন   নিশ্চিত ভাবে ডায়াবেটিকস আপনাকে শিখিয়ে দেবে “ যা আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না তা সহজে গ্রহন করতে এবং যা পরিবর্তন করতে পারবেন সেই কাজ করতে “যেহেতু ডায়াবেটিকস রোগীদের শরীর, মন এবং আত্মার অবস্থা দ্রুত বদলায় তারা যে কোন পরিবর্তন দ্রুত বুঝতে পারে। কি আপনার নিয়ন্ত্রনের মধ্যে আর কি আপনার আয়ত্তের বাইরে সেই পার্থক্য তারাই বুঝবে যারা জ্ঞানী । অর্থাৎ ডায়াবেটিকস হলেই আপনার জ্ঞানী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে অনেকাংশে । কারন ডায়াবেটিকস হওয়ার সুবাদে আপনি   এখন খুব ভাল বুঝতে পারবেন কি কি আপনার নিয়ন্ত্রনের মধ্যে   আর কি কি বিষয় আপনার নিয়ন্ত্রনের বাইরে।
১৬। শক্তিমান হতে শিখবেনঃ
Lao Tzu, a Chinese sage, said, "He who gains victory over others is strong, but he who gains victory over himself is all powerful."
আপনি বুঝতে শিখবেন সুসাস্থের সুখ আর অসুস্থতার বেদনা , হয়ত একই দিনে সুস্থতা অসুস্থতা অনুভব করবেন । শিখে যাবেন কিভাবে বেদনা থেকে সুখের দিকে ফিরে আসতে হয়। সব সব শিখে যাবেন। আপনি আরও উপলব্ধি করবেন  পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ হতে পারে , এমনকি জঘন্ন হতে পারে। কিন্তু আমাকে প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হবে । মানসিক শক্তির সবটুকু দিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। শরীরে প্রতিটি পেশী দিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। এই যুদ্ধ প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পরপর শুরু  হয়ে যাবে আজকের যুদ্ধে আমাকে জিততেই হবে। কারন সবচেয়ে বড় এবং মহৎ যুদ্ধ হচ্ছে নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ । আর এই যুদ্ধ প্রতিদিন বিজয়ী হয়েই আমি বেঁচে আছি ।  আমি ইতিমধ্যে মহৎ, শক্তিমান হয়ে গেছি বলেই বেঁচে আছি।  সিংহের মত লড়াই করে একদিন বাঁচা, শেয়ালের মত হাজার দিন বেঁচে থাকার চেয়ে অনেক বেশি উত্তম।
১৭।
জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পাবেনঃ   ডায়াবেটিকস হয়ে যাওয়া মানে কি জানেন – বুড়ো হবার আগেই নিজের বিবেকের মুখমুখি হওয়া । শরীর, মন আত্মার পরিবর্তনগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে পারলে  জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলোকে খুঁজে বের করা হয়ে যাবে অনেক সহজ। কারন

প্রতিটি মানুষকে একটা নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং সেই কাজটি তার হৃদয়ে গ্রন্থিত আছে প্রতিটি মানুষ ভেতর থেকে ঠিক সেই কাজটি করার জন্যই তাড়না অনুভব করে




বিভিন্ন কারনেই  ডায়াবেটিকস সারা দুনিয়ার মানুষকে এক স্টেশনের প্লাটফর্মে এনে দাড় করিয়ে দিয়েছে। তাই ডায়াবেটিকসকে অভিশাপ হিসেবে নয় আশীর্বাদ হিসেবে ভাবুন। দেখবেন আরও বেশি সুন্দর , সার্থক  এবং উদ্দেশ্যযুক্ত বলে মনে হবে। আরও বেশি উপভোগ্য বলে মনে হবে । নিয়ম শৃঙ্খলাকে  আরও বেশি আনন্দ আহরনের উপকরন বলে মনে হবে। যত বেশি আশাবাদী হবেন তত বেশি নিজেকে ভাগ্যবান হিসেবে দেখতে পাবেন।



Comments

Popular Post

নেশার ফাঁদ থেকে মুক্তির আধ্যাত্মিক চিকিৎসা

আত্মার ভেতর এবং বাইরের রহস্য

মাদক, ড্রাগ, নেশা- সর্বনাশা