শরীর-মন-আত্মার পরিচয়





ছবি ঃ শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষিক্ত জাইগোট  থেকে পূর্ণ বাচ্চা

এই লেখাটির শেষ পর্যন্ত পড়লে যে তথ্যগুলো আপনার কাছে স্পষ্ট হবে

১। শরীর মন আত্মা কি ? তাদের  অস্তিত্বের সূচনা ।  
২। শরীর-মন-আত্মা  কি কি ভাবে একটার থেকে আর একটা আলাদা ?
৩। শরীর –মন- আত্মা সম্পর্কিত জ্ঞান লাভের প্রয়জনিয়তা এবং উপকারিতা  


পরিবেশ , সময় এবং সামাজিক নানান প্রথার শর্ত মেনে কোন এক শুভ ক্ষণে  আপনার, আমার এবং অন্য সকলের জন্মের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল এই পৃথিবীতে ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার ৪০ দিনের মাথায়  আত্মা এসে যখন শরীরে প্রবেশ করেছিল, তখনই শুরু হয়েছিল হৃৎপিণ্ডের ডুব-ডাব শব্দপ্রথমবারের মত টের পেয়েছিলাম আত্মা আর শরীরের  অস্তিত্ব। এর পরে  পৃথিবীতে এসে কান্নার মাধ্যমে  দেখা পেয়েছিলাম মনের অর্থাৎ  পৃথিবীতে আসার সিরিয়াল ছিল আত্মা –শরীর –মন দুনিয়াক থেকে বিদায় নেয়ার  সময়ও সিরিয়াল হবে  আত্মা-শরীর-মন। তবে স্বভাবতই  পৃথিবীতে বসবাসকালে  সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পায় শরীর এবং তারপর  মন –আত্মা। যেহেতু শরীরের ভেতর দিয়েই আত্মা এবং মন তার অস্তিত্ব লাভ করে তাই শরীরকে গুরুত্ব দিলে আত্মা এবং মন তেমন আপত্তি  করে না। তারা জানে শরীর যতদিন সুস্থ-সবল থাকবে,  ততদিন তারা পৃথিবীতে থাকতে পারবে । শরীর না থাকলে তাদের দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে এবং  মহাবিশ্বের নতুন কোন স্থানে  তাকে যাত্রা করতে হবে।

এখানে  আমাদের গবেষণার বিষয় শরীর মন আত্মা এবং এদের ভারসাম্যপূর্ণ  সদ্ব্যবহার। আশাকরি আমরা নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজেকে দেখার  সুযোগ পাব এবং নিজের প্রতিভা বিকাশের আনন্দে অনুরণিত হব।


নিজেকে নতুন ভাবে দেখার  শরীর-মন- আত্মার জগতে আপনাকে স্বাগতম।

পৃথিবীর সমস্ত মহা মনিষী, বিজ্ঞানী, লেখক ,ধনবান , সফল মানুষদের একটা  বিষয়ে আমরা মিল খুঁজে পেয়েছি । সেটা হচ্ছে তারা শরীর মন আত্মায় এক। তাদের ভেতর বাহিরের পার্থক্য ছিল অতি সামান্য। গবেষণায় আরও পেয়েছি  ভেতরে এবং  বাহিরে  অর্থাৎ  শরীর-মন- আত্মায় যার  পার্থক্য যত কম ছিল সে তত বেশি সফল ছিল। শরীর মন আত্মাকে একই সুত্রে ছন্দায়িত করতে পেরেছিল বলেই তারা যে  কোন সমস্যা অনায়াসে মোকাবিলা করতে পেরেছিল সব অসাধ্য সাধনের মূল রহস্যটা ছিল এখানেই  মহা মনিষীরা  বৈষয়িক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সাফল্য লাভ করে যে পথ প্রদর্শন করে গেছেন আমরা সেই সব পথের অনুসন্ধান করবোতাদের সফলতার গোপন রহস্য, চিন্তার কৌশল এবং এসব কিছুর সাথে আধ্যাত্মিকতার সম্পর্ক নিয়ে এখানে আলোচনা করবো।   
  শরীরের ভেতরেই  মন এবং আত্মা বসবাস করলেও এদের নাম পরিচয়, ধর্ম , অভিযোজন ক্ষমতা , আয়ুস্কাল , অনুপ্রেরনা, সুখে এবং বিপদে  সাড়া দেয়ার ক্ষমতা ভিন্ন তাই এদেরকে  আলাদা আলাদা ভাবে জানা সবার আগে প্রয়োজন যদিও আমরা সবকিছুই জানি তবু ভিন্ন আঙ্গিকে শরীর-মন-আত্মার কে দেখার সুবিধার জন্য  এবং এর ত্রিমাত্রিক ছবি মানস পটে স্পষ্ট করার জন্য আমারা কিছু উপমা সংগ্রহ করেছি। আশা করি এতে শরীর-মন-আত্মা সম্পর্কিত ধারনা অনেকটাই পরিস্কার হবে। 

শরীর-মন-আত্মা কি?

আমরা প্রতিটি জীবিত মানুষ শরীর মন আত্মার অধিকারী। এই তিনটি একই দেহে বাস করলেও এদের মূল বৈশিষ্ট্য এবং ধর্ম সম্পূর্ণ আলাদা। তারা কি কি ভাবে আলাদা তা আমরা একটু পরেই উপমার সাহায্য নিয়ে ব্যাখা করবো।
 মন আত্মা আমাদের শরীরের মাঝে এত বিলীন হয়ে রয়েছে যে , এদের আর আলাদাভাবে কল্পনা  করতে পারি না। কিন্তু  নিজের ভেতরের সব শক্তির দেখা পাওয়ার জন্য , এই তিনটিকে আলাদা ভাবে শ্রেণীবিভাজন এবং  বিশ্লেষণ জরুরী । নানান রকম মেধা এবং বয়সের  ছাত্রদের যেমন একই ক্লাসে ভর্তি করলে চলে না। তেমনি শরীর – মন –আত্মাকে একাকার ভাবলে চলবে না।
যেভাবে   দিনমজুর , ইঞ্জিনিয়ার , আর রাষ্ট্রপ্রধান কে একই কাজ দেয়া যায় না; তেমনি শরীর মন আত্মাকে  একই কাজ দিলে চলবে না; সবাইকে একই কাজের কাজী মনে করলেও চলবে না। দিনমজুর থেকে রাষ্ট্রপ্রধান এদের  একই কাজে নিয়োজিত  করলে সকলকেই  অপমান করা হয়,  প্রতিভার  অপচয় করা হয়, সৃষ্টিকর্তার দেয়া উপহারকে  কম দামে বিক্রি করা হয়। শরীর মন আত্মার প্রকৃত পরিচয় পেতে আমরা কিছু উপমার সাহায্য নেব । এতে করে এদের বৈশিষ্ট্য , ধর্ম, গঠন ,  ভালোলাগা , মন্দ লাগা, এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আমরা ধারনা স্পষ্ট হবে ।


উপমা
প্রধান প্রধান উপকরন বিদ্যুৎ পরিবাহি তার , ট্রানজিষ্টর , বিদ্যুৎ ।
শরীর-মন- আত্মাকে বোঝার জন্য  বৈদ্যুতিক তারকে শরীর , ট্রানজিষ্টর কে মন এবং বিদ্যুৎ কে আত্মা হিসেবে কল্পনা করতে হবে ।
বৈদ্যুতিক তারকে দেখা যায় ;  ধরা যায় ,  ছোঁয়া যায় , পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা যায় শরীরও তাই শরীরকে কেন্দ্র করেই আপনার আমার পৃথিবী তৈরি হয়। শরীর আছে বলেই আপনি আছেন, শরীর নাই মানে আপনি মৃত। বিশ্ববিখ্যাত  মৃত মানুষের মন এবং আত্মা সর্বোৎকৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও  মারা যাবার পর , জীবিত সব মানুষদের সাথে বসবাসের  অধিকার হারায়। 
 তারের উপাদান দিয়ে যেমন  ট্রানজিষ্টর তৈরি হয় তেমনি  শরীর দিয়েই  মন গঠিত হয়।  পুরুষের শরীর পুরুষের মন, নারীর শরীর নারীর মন তৈরি করে ।
আবার তারের ভেতর দিয়েই যেভাবে  বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তেমনি  শরীরের ভেতর দিয়েও আত্মা প্রবাহিত হয়।  


শরীর ঃ
অন্যান্য প্রাণীর মত মানুষও শরীর নামক এক কাঠামো দিয়ে গঠিত। তবে আনবিক পর্যায়ে  মানুষ, বস্তু এবং পশুপাখির   শরীরের মধ্যে তেমন  কোন পার্থক্য নেই। মানুষের শরীর যেমন  অনুপরমানু  দ্বারা গঠিত তেমনি বস্তু এবং পশুপাখিরাও  অনুপরমানু দ্বারা গঠিত।  দৈহিক এবং যৌন  ক্ষুধা নিবারন এবং টিকে থাকার কৌশল রপ্ত করাই শরীরের আসল উদ্দেশ্য।   



শরীরের বৈশিষ্ট্য
১। একটি কাঠামো থাকবে
২। একই সময়ে ২টি  স্থানে থাকতে পারবে না।
৩। শরীরের গতিবেগ তুলনামূলক অনেক কম হবে মন এবং আত্মার তুলনায় ।   
৪। শারীরকে  ব্যাথা দিলে সেই কষ্ট মন এবং আত্মা পর্যায়ে পৌছাতে পারে আবার নাও পারে। নির্ভর করবে মানুষটির আত্মিক উন্নতির উপর । আত্মা যত উন্নত হবে শারীরিক কষ্ট তত কম  অনুভব করবে।  
৫। টিকে থাকার জন্য শরীরের   খাদ্য গ্রহন বাধ্যতামূলক
৬। শরীরকে জেলখানায় আটকে রাখা যায়
৭। শারীরের জৈবিক  ক্ষুধা নিবারন এবং বাচ্চা উৎপাদনের  জন্য  অন্য  একটা মানুষের  শরীর প্রয়জন হয়।
৮। মানুষের বয়স নির্ণয়ের মাপকাঠি ধরা হয় শরীর কতদিন পৃথিবীতে থেকেছে সেই অনুযায়ী। পৃথিবীর রীতিনীতিতে মন এবং আত্মার বয়স উপেক্ষা করা হয়।



মনঃ
ট্রানজিষ্টরের কাজ বিদ্যুতের গতিকে বাড়িয়ে, কমিয়ে কিংবা থামিয়ে দেয়া । এছাড়াও  বিদ্যুৎ চলাচলের রাস্তাকে বাকিয়ে বা সোজা করে দিতেও  ট্রানজিষ্টরের দরকার হয়। মানুষের মনও আত্মার শক্তিকে এভাবে শরীরের ভেতর দিয়ে পরিচালিত করে। মানুষের ভেতরের অবিরাম ক্ষুধা তৈরি হয়, খাবারের ক্ষুধা , যৌন ক্ষুধা , সম্পদের ক্ষুধা , ক্ষমতা অর্জনের ক্ষুধা , সম্মান লাভের ক্ষুধা , জ্ঞানের ক্ষুধা ইত্যাদি নানারকম ক্ষুধা । এইসব ক্ষুধার গতিকে বাড়িয়ে, কমিয়ে বা দমন করে মানুষের মন। মানুষের মন ঠিক করে দেয় শরীরটা বাঁকা পথে চলবে না সরল পথে চলবে।
মনের এই বৈশিষ্ট্যের কারনেই তিব্র ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমরা মিষ্টির দোকানে সুসজ্জিত , সুস্বাদু মিষ্টির উপর ঝাপিয়ে পড়ি না।
ব্যাংকের ভেতর প্রচুর টাকা আছে জানা সত্ত্বেও ব্যাংকের সামনে সারাক্ষণ ওৎ পেতে বসে থাকি না। বরং অনেক পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করি।




মনের বৈশিষ্ট্যঃ
১। মনের কোন আকার আকৃতি নেই,
২।  আবেগ বা অনুভূতি তৈরি এবং প্রকাশের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয় । এই পর্যন্ত ৬০০০ আবেগকে শব্দের মাধ্যমে বন্দি করা গেছে। আরও আনেক অনুভূতি প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।
৩। শরীরের বেগকে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেয়া এবং আধ্যাত্মিক জগতের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করাই মনের কাজ ।  
১। মনের খাদ্য  গ্রহনের কোন প্রয়জন নাই
২। কোন প্রকার দেয়াল দিয়ে মনকে আটকে রাখা যায় না।
৩। মনের গতি প্রায় অসীম
৪। মনকে ভেঙ্গে দিয়ে শরীরকেও কষ্ট দেয়া যায়
৫। একটা মন আর একটা মনের প্রতি সবচেয়ে বেশি অনুরক্ত হয়।
৬। মনের ক্ষুধা নিবারনের জন্য প্রয়োজন  বই , বিনোদন , প্রকৃতি , মানুষের সঙ্গ  
৭। শরীরের মৃত্যুর মাধ্যমে মনেরও মৃত্যু ঘটে ।
৮। মনের বয়স আর শরীরের বয়সের গতি সমান তালে এগিয়ে যায় না। কেউ অল্পতেই  পেকে ইঁচড়ে পাকা হয়ে যায়। আবার কোন  বৃদ্ধ  ৭০-৮০ তে ও  যুবকের মন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।দৃষ্টিভঙ্গির সীমানার উপর মনের বয়স নির্ভর করে । যে যত  বেশি দূরদৃষ্টি সম্পূর্ণ সে তত বয়স্ক। অর্থাৎ মনের সাহায্যে ০ থেকে শুরু করে ১০০০০০ বছর কিংবা তার চেয়েও আর বেশি বছর বেঁচে থাকা যায়।


আত্মা  
বিদ্যুৎ আমাদের  চারপাশে বাতাসের মতই সদা সর্বদা বিরাজমান , চোখের সামনেই থাকে অথচ দেখা যায় না। কেবল মাত্র বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলাফল দেখা যায় , অনুভব করা যায়। যেমন হৃৎপিণ্ডের ঢুব-ডাব আওয়াজ শোনা যায় অথচ এর শক্তির উৎস ঠিক কোথায় তা বোঝা যায় না।





আত্মার বৈশিষ্ট্য ঃ
১। আত্মার  নিদিষ্ট  কোন আকার আকৃতি খবর জানা যায় না । তবে যে কোন শরীরে ভর করে আকৃতি ধারন করতে পারে বলে কিতাবে উল্লেখ আছে।
২। এর গতি মনের চাইতে বেশি
৩। জীবনের শুরু এবং শেষে  আত্মার উপস্থিতি  এবং জীবিত অবস্থায় স্বপ্নের ভেতর দিয়ে  এর   অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়।
৪। শরীরের মৃত্যু বা ধ্বংসের মাধ্যমে আত্মার অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যায় না।
৫। আত্মার বয়সের কোন সীমাপরিসীমা নেই । এটি মহাজগতের অংশ বিধায় মানুষের তৈরি সেকেন্ড , মিনিট , বছর , কিংবা আলোকবর্ষ কোন পরিমাপক দিয়েই আত্মার বয়সকে মাপা যায় না।
উপরের উপমাগুলোর সাহায্যে স্পষ্টতই বোঝা যায় শরীর-মন-আত্মার আলাদা বৈশিষ্ট্য এবং অস্তিত্ব। 
আরও কিছু সংক্ষেপিত উপমা যার সাহায্যে শরীর-মন-আত্মা সম্পর্কিত তথ্য পেয়ে যাব ।


উপমা ২ ঃ 
প্রধান প্রধান উপকরন – বীজ,পানি,মাটি,  আলো , বাতাস,তাপ , সময়
এখানে বীজ +পানি+মাটি =শরীর,  আলো + বাতাস+তাপ=  মন, এবং সময় কে আত্মা হিসেবে ধরে নিতে  হবে।
উপমা ৩ ঃ হাইড্রোজেন + অক্সিজেন =  শরীর , হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের বিক্রিয়াকে মন। এবং পানির জীবন সঞ্জীবনী শক্তিকে আত্মার সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
উপমা ৪ ঃ গাড়ীর চেসিস = শরীর, ইঞ্জিন , ব্রেক, এক্সিলারেটর = মন, তেল বা বিদ্যুৎ  = আত্মা
উপমা ৫ ঃ নারী দেহ = শরীর, স্নেহ +ভালবাসা +মায়া মমতা = মন, নতুন একটা দেহ তৈরির ক্ষমতা = আত্মা
উপমা ৬ ঃ
ঐতিহাসিক ভাষণের
 ভাষণের শব্দ = শরীর
আত্মবিশ্বাসী  উচ্চারন, মোহাচ্ছন্নকারী কথামালা = মন
যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রানিত করার ক্ষমতা = আত্মা

উপমা ৭ ঃ আগুন
আগুনের তাপ = শরীর
সৃষ্টি বা ধংসের জন্য আগুনের ব্যবহার = মন
জ্বালানোর ক্ষমতা = আত্মা  
শরীর-মন-আত্মা কে আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করার প্রয়োজনীয়তা এবং  উপকারিতা

১। রোগের উৎস সন্ধান এবং এর প্রতিকার নিশ্চিত করার জন্য । সাধারণত রোগের যেখানে সৃষ্টি হয় সমাধান তার গভীরে থাকে। পানি বাহিত শারীরিক রোগের নিরাময় মনে;  পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা চর্চায় উৎসাহিত হলেই সকল পানিবাহিত রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। অর্থাৎ শরীরের অসুখের সমাধান মনের শিক্ষার মধ্যে লুকায়িত থাকে । যারা মনের এই পরিচ্ছন্নতার চর্চা করে তারা উপকার ভোগ করে , যারা চর্চা করে না তারা রোগ ভোগ করে। এখন এইডস সহ নানান যৌনবাহিত রোগের ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন হচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসন পালন করা। অর্থাৎ  এইডস যদিও  হয় শরীরে কিন্তু এর প্রতিষেধক লুকিয়ে আছে আধ্যাত্মিকতায়।
২।  তেমনি ভাবে মনোরোগের চিকিৎসা করতে হলে আত্মিক / আধ্যাত্মিক স্তরে তার পরিচর্চা করতে হবে এবং সমাধান এখানেই পাওয়া যাবে। মনের অসুখের সমাধান মনে নাই , আত্মার ভেতরে আছে এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে।
৩। আর আত্মার অসুখ নিরাময়ের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে ধর্না দিতে হবে। নইলে আত্মিক অসুখের সমাধান শুধু  কঠিনই নয় , প্রায়  অসম্ভব হয়ে যাবে।
৪। একেক মানুষ একেক জাইগাই গিট লেগে থাকে। কেউ নিজেকে অসুন্দর, আত্মবিশ্বাস হীন, পাপী  বলে মনে করে সারাক্ষণ  আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকে। অথচ শরীর, মন, আত্মার অসুখের স্থান  সুনিদিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা গেলে নিরাময় হবে দ্রুত গতিতে। অনাবশ্যক ডাক্তার দেখানোর  প্রয়জনিয়তা কমে আসবে।  শরীর –মন- আত্মা সম্পর্কে সচেতন  মানুষ তখন নিজেই নিজের রোগের উৎস , কারন এবং প্রতিকার করতে উৎসাহিত হবে।   
৪। মানুষের কর্ম প্রচেষ্টা বিভিন্নমুখী ।কেউ শারীরিক পরিশ্রম নির্ভর কাজ করতে সাচ্ছদ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে । কেউ মানসিক চাপ নিতে পছন্দ করে।কেউ আবার আধ্যাত্মিক কাজ কর্মে উৎসাহিত হয়। নিজের সবলতা জানার পর সেই অনুযায়ী কাজ বেছে নিলে  মানুষের সাফল্য লাভ করতে সময় লাগে না।
৫। মানুষ একবার নেশাগ্রস্থ হয়ে গেলে , তা একেবারে নিরাময় করা প্রায় অসম্ভব। নেশার আসক্তি  বার বার ফিরে আসে । শরীর- মন – আত্মা সম্পর্কিত জ্ঞান ড্রাগ  , সেক্স অ্যাডিক্সনে  আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যাবে । এর কার্যকারিতা সুফলদায়ি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত।  
৬। শরীর –মন –আত্মা কার গুরুত্ব কতটুকু তা বোঝা যাবে। কাকে, কখন, কত মাত্রার প্রাধান্য দিতে হবে তা নিজের কাছে পরিস্কার হবে।
৭। রাস্তায় গাড়ী চালানোর সময় কখন কোন বাঁকে আপনি মোড় নেবেন তা শুধু নিজে জানলে চলে না । ইনডিকেটরের মাধ্যমে অন্যকেও জানাতে হয় । শরীর মন আত্মার জ্ঞান শুধু আপনার নিজের সম্পর্কে ধারনা স্পষ্ট করবে না, অন্যকে বুঝতে এবং বোঝাতে সাহায্য করবে ।
৮। পৃথিবী ব্যপি হলিষ্টিক   দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব বাড়ছে। শুধু নিজে নেব , খাব, উপভোগ করবো এই অসুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি  থেকে বের হয়ে অন্যকে কি দিতে পারবো, কিভাবে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের জন্য সেবা সৃষ্টি করতে পারবো,  কিভাবে পৃথিবীর ঋণ শোধ করবো এই মনোভাব মানুষ লালন করছে। মানুষ এখন উপলব্ধি করছে What is goes around comes around . শরীর-মন- আত্মার জগত সম্পর্কে জ্ঞান মানুষকে সবার সাথে সাম্যাবস্থায় বসবাস করতে সহযোগিতা করবে ।

৯। প্রতিটি ধর্মের মূল বানি মর্মকথা এবং উদ্দেশ্য নিজের এবং অন্যের কল্যাণ করা । বিজ্ঞানের উদ্দেশ্যও তাই। শরীর মন আত্মা সম্পর্কিত জ্ঞান সেই সত্যকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে।  


শরীর, মন, আত্মা সম্পর্কিত আমাদের এই গবেষণা আপনাকে একই সাথে বৈষয়িক , মানসিক , আধ্যাত্মিক বিষয়ে তথ্য দেবে। যা  আপনার চিন্তার জগতের খোরাক যোগাবে। সকল ঘটনার বাহ্যিক , অভ্যন্তরীণ এবং গভীরতম উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারনা দেবে। যখন আপনি ছোট থেকে বড় সকল কাজের মূল উদ্দেশ্যগুলো বুঝতে শুরু করবেন তখন জুতো সেলাই থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সব কাজে পাবেন জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পুরনের আনন্দ।  আর তখন   দৈনন্দিন একঘেয়েমি কাজও হয়ে উঠবে  অফুরন্ত সুখের উৎস। শরীর মন আত্মা ব্লগ পড়ুন ,  প্রশ্ন করুন এবং আলোচনা ও শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে   । সাহায্য করুন পৃথিবীর রহস্য উন্মোচনের।

Comments

  1. এখানের ব্লগ গুলো অনেক তথ্যবহুল, ধন্যবাদ "শরীর মন আত্মা"

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular Post

নেশার ফাঁদ থেকে মুক্তির আধ্যাত্মিক চিকিৎসা

আত্মার ভেতর এবং বাইরের রহস্য

মাদক, ড্রাগ, নেশা- সর্বনাশা