আত্মার ভেতর এবং বাইরের রহস্য


আত্মা কি? আত্মার কাজ কি? আত্মাকে অস্বীকার করে কি বেঁচে থাকা যায়? 
শরীরের  যে অংশে  স্বপ্ন এবং ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে আসে  তাকেই আত্মা বলে। আত্মার কাজই হচ্ছে যা কিছু অদৃশ্য আছে তাকে দৃশ্যমান জগতে নিয়ে আসা এবং ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করা।  পৃথিবীতে নতুন জ্ঞান যুক্ত করা এবং পুরানো জ্ঞানের জঞ্জাল মুক্ত করার কাজ করে আত্মা। পৃথিবীতে ভারসাম্য সৃষ্টিতে দিনরাত অবিরাম কাজ করে যায় আত্মা। শরীর মন এক সময় বিশ্রাম নেয়,  ঘুমিয়ে পড়ে । আত্মা ঘুমায় না , বরং শরীর ঘুমিয়ে পড়লে আত্মা শরীর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসে।  তার কাজের পরিধি শরীর ছাড়িয়ে পৃথিবীময় বিস্তৃত। 


লক্ষ্যঃ  
মানুষের  জীবনের নানান সমস্যার গিট খুলতে এবং জীবনে নতুন উদ্যম ও গতি সৃষ্টি করতে সাহায্য করা মানুষকে নিজের  অন্তর্দৃষ্টির সাথে পরিচয় করে  দেয়া এবং  যে কোন  সমস্যার সবচেয়ে  সুন্দর সমাধান  খুঁজে বের করতে  অনুপ্রানিত করা



আত্মার সাধারন বৈশিষ্ট্য ঃ

১। বিমূর্ত  হওয়ার কারনে আত্মার কোন নিদিষ্ট আকার নেই।

২। প্রতিটি  জীবনের শুরু এবং শেষে  আত্মার উপস্থিতি স্পষ্ট টের পাওয়া যায়।  এবং জীবিত অবস্থায় স্বপ্নের ভেতর দিয়ে  এর   অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়।

৩। সরাসরি সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পর্ক তাই সৃষ্টিকর্তার সব কাজের অনুকরন এবং অনুসরণ করাই আত্মার কাজ।   সৃষ্টিকর্তার কাজ কি? ভারসাম্য রক্ষাকরা,   সৃষ্টি করা , ন্যায়বিচার করা, ক্ষমাকরা, রহম করা ইত্যাদি । আত্মার কাজও তাই এবং এই সব কাজেই বিশুদ্ধ  আত্মা অনুরক্ত থাকে।  যে মানুষ যত বেশি সৃষ্টিকর্তারগুনে গুণান্বিত হতে পারে , সে তত বেশি সফল মানুষ তত বেশি ক্ষমতাবান মানুষ। এসব মানুষের ক্ষমতা তাদের মৃত্যুর পরও হাজার হাজার বছর ধরে ক্রিয়াশীল থাকে।

৪। শরীর এবং মন যখন সৃষ্টিকর্তার বেঁধে দেয়া  সীমা লঙ্ঘন করে তখন আত্মা কষ্ট পায়। মানসিক রোগ এবং দুঃস্বপ্নের মাধ্যমে আত্মা তার কষ্টের জানান দেয়। তাই যে দেয় সে ভাল ঘুমায় আর যে কেড়ে নেয় সে  ভাল খায়। 

৫। শরীরের মৃত্যু বা ধ্বংসের মাধ্যমে হারিয়ে যায় কিন্তু আত্মা কখনও ধ্বংস হয় নাআত্মার কোন মৃত্যু নাই।  আত্মা হচ্ছে  শক্তি , আত্মা  কেবল স্থান বদলায়। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয় ।

৬। আত্মিকভাবে জীবিত , মৃত  সমস্ত মানুষের বয়স সমান কারন সৃষ্টিকর্তা সব মানুষের আত্মা এক সাথে সৃষ্টি করেছেঅর্থাৎ আত্মার দিক থেকে দাদা , বাপ, ছেলে তিনজনের বয়সই সমান!

৭। শরীর এবং মনের গতি এবং চলাচল যেখানে শেষ হয়ে যায় আত্মার গতি, কাজ সেখান থেকে শুরু হয় । এই জন্য দেখা যায় শরীর এবং মনের চাওয়া পাওয়া আত্মার চাওয়া পাওয়া থেকে আলাদা এবং অনেক ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ । যেমন দান করলে বা কিছু দিয়ে দিলে শরীর এবং মনের হিসাবে কমে যায় কিন্তু আত্মার হিসাবে দান করলে বেড়ে যায়। কেন বেড়ে যায় ? পরে অন্য কোন টপিকসের মধ্যে আমরা তা আলোচনা করবো।

৮। মনের ভেতর যেমন ইতিবাচক এবং নেতিবাচক আবেগের উদ্ভব হয় তেমনি প্রকৃতিগত ভাবে আত্মারও সুন্দর - অসুন্দর , ভাল – মন্দ, সাদা – কালো ইত্যাদি আত্মিক শক্তির উদ্ভব হয়। আমরা যে শক্তির চর্চা যত বেশি করবো সেই শক্তি তত শক্তিশালী হবে। তবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অবস্থায় আত্মাকে একেবারে সাদা অথবা একেবারে কালো বানানো সম্ভব না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝলে বিষয়টি আরও স্বচ্ছ হবে। মানুষ পৃথিবীতে কখনই ফেরেস্তার মত পরিস্কার কিংবা শয়তানের মত কলুষিত হতে পারবে না। এই ইং ইয়াং ছবিটি দেখুন ভালোর সাথে মন্দ এবং মন্দের সাথে ভাল কিভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। পৃথিবীর প্রায় সবকিছুতে এভাবেই ভালোর সাথে মন্দ এবং মন্দের সাথে ভাল বিষয় জড়িয়ে থাকে।

 
অর্থাৎ জীবিত  মানুষ ভাল এবং মন্দ দুটো কাজই  করে যেতে থাকবে । 

৯। স্রষ্টার স্মরণ এবং স্রষ্টার আদেশ ও নিষেধ পালন করাই হচ্ছে  আত্মার খাদ্য । সৃষ্টিকর্তার নাম, মহিমা, কার্যকারণ সম্পর্কে চিন্তা, আদেশ নিষেধ পালন, নতুন কিছু সৃষ্টি , অন্যকে সাহায্য ইত্যাদি কাজে আত্মা শান্ত হয়। নিজের ও অন্যের  ক্ষতি করা, স্বার্থপরতা , কুটিলতা ইত্যাদি  ষড়যন্ত্র মূলক কাজে আত্মা অশান্ত হয় বৈষয়িক সব কিছু থাকার পরও কিছু মানুষ অশান্তিতে ভুগে থাকে যার অন্যতম কারন আত্মার খাদ্যের ব্যাপারে উদাসিন থাকা। 

আত্মার ময়নাতদন্তঃ
আত্মার দৃশ্যমান রুপঃ  
 ভ্রূণের ভেতর যখন হৃদ স্পন্দন দেখা যায় এবং মৃত্যুর পর যখন শরীরটাকে নির্জীব অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় তখন আত্মার অস্তিত্ব স্পষ্ট টের পাওয় যায়।  আত্মার উপস্থিতি জীবনের স্পন্দন তৈরি করে এবং আত্মার অনুপস্থিতি জীবনকে থামিয়ে দেয়। তখন শরীর এবং মন মূলহীন অবস্থায় পড়ে থাকে।
আত্মার অদৃশ্য রুপঃ  
আত্মা স্বপ্নের মাধ্যমে তার অদৃশ্য উপস্থিতির জানান দেয়। আত্মা স্বপ্নের ভেতর দিয়ে  শরীরের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। সারা শরীর এবং মনের চাওয়া পাওয়ার মধ্যে যে ব্যবধান তৈরি হয় সেইসব পার্থক্যগুলো , বোঝাপড়া গুলো আত্মা স্বপ্নের মাধ্যমে সমান সমান করে দেয়। আত্মার প্রধান কাজই হচ্ছে শরীর এবং মনের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করে দেয়া ।
আত্মার আধ্যাত্মিক রুপ ঃ
 আত্মার আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে আমাদের আসমানি কিতাবের সাহায্য নিতে হবে সেখানে বলা হয়েছে আর আপনাকে তাঁর রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে বলুন, রূহ আমার রবের আদেশঘটিত এবং তোমাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে অতি সামান্যই। সূরা আল ঈশরা ১৭ আয়াত ৮৫ ।   অর্থাৎ আত্মার উপর সরাসরি সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ কার্যকর হয় এবং আমরা মানুষ খুব বেশি এই সম্পর্কে জানি না। তবে রুহ বা আত্মার ফলাফলগুলো আমরা দেখতে পারি। যেমন  আমরা দেখতে পায় আত্মার তাড়নায় বৈষয়িক  দিক থেকে সফল  মানুষ হটাৎ  করেই পুরো বদলে যায়। যদিও তার শরীর, মন একই থাকে কিন্তু কোন একটি ঘটনা তার পুরো  জগতকে বদলে দেয়। উদাহরন হিসেবে Cat Stevens বর্তমান নাম ইউসুফ ইসলাম
 , ব্রিটিশ সাংবাদিক Yvonne Ridley এবং  টনি ব্লেয়ারের শালি Lauren Booth এর ইসলাম ধর্ম গ্রহনের কথা বলা যেতে পারে। তারা প্রত্যেকে তীব্র আধ্যাত্মিক অনুভূতির কথা বলেছে , যা সত্যি সত্যি আমাদের চিন্তার খোরাক যোগায় এবং আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে পুনরায় ভাবতে শেখায়। আমাদের চারপাশেও একটু খোঁজ নিলেই দেখতে পাবেন ।  বড় দুর্ঘটনার সময় কিছু মানুষ অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায়! কেন বেঁচে যায়? আধ্যাত্মিক রহস্য ছাড়া আর কি নাম দেবেন এসব ঘটনার  
আবার  বাস্তব জীবনে এবং বড় ছোট অনেক যুদ্ধে যে ফলাফল হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল তা না হয়ে ভাগ্যগুনে সম্পূর্ণ বিপরীত হয়। কেন  হয়? সেটাও কি আধ্যাত্মিক রহস্য নয়? 

আত্মার পোস্টমর্টেমের এবং সার্বিক বিচার বিশ্লেষণের  পর আমরা  কিছু 

সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি সেগুলো হল ঃ

১। আমরা জানি আত্মা স্বপ্নের মাধ্যমে বাহ্যিক এবং অভান্তরিন , শারীরিক এবং মানসিক জগতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে । যেসব মানুষগুলো বাহ্যিক অর্থাৎ পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা , মারামারি , খুনোখুনি সৃষ্টি করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করে আত্মা। হয় তারা ভীষণ রকম শারীরিক , মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করে অথবা  নিজেই নিজেকে হত্যা করে ন্যায় নিশ্চিত করে।
পদার্থবিজ্ঞানে শক্তির নিত্যতা সূত্রে বলা আছে  “ বিশ্বের মোট শক্তির পরিমান ধ্রুবক বা নিদিষ্ট। শক্তি অবিনশ্বর, শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় নাএক রূপ থেকে শক্তিকে কেবলমাত্র অন্য রূপে রূপান্তরিত করা যায়  যেমন, রাসায়নিক বিক্রিয়ার আগে ও পরে বস্তু উপাদানের পরিবর্তন ঘটে কিন্তু তার শক্তি কখনও হারিয়ে যায় না। যেমন পানিতে লবন মিশে গেলেও তা একেবারে হারিয়ে যায় না শুধু এদের রুপের পরিবর্তন ঘটেপুনরায় লবন পানিকে আলাদা করা যায়। আত্মাও এক শক্তি যা আমাদের দেহ মনকে চালনা করে,  তাই শরীর মন আত্মা মরে গলে পচে  গেলেও তা একেবারে হারিয়ে যায় না। শরীর মন আত্মার সৃষ্টিকর্তা এগুলোকে পুনরায় রুপ দান করে দিতে পারে।
৩। আত্মার যেমন একতা ভাল রুপ আছে তেমনি এর খারাপ রুপও আছে। যেহেতু আত্মা আমার আমির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তাই  সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আত্মার খারাপ করার অনিষ্ট থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
৪। মনের অসুখ হলে আত্মিক চর্চা মনকে সুস্থ করতে পারবে কিন্তু আত্মার অসুখ হলে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ সুস্থ করতে পারবে না। মেডিটেশনের চর্চা এক ধরনের আধ্যাত্মিক চর্চা । যা চর্চার মাধ্যমে মনকে সুস্থ রাখা যায়। কিন্তু আত্মায় অসুখ হলে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তাকে চেনা ছাড়া কোন উপাই নাই।



Comments

Popular Post

নেশার ফাঁদ থেকে মুক্তির আধ্যাত্মিক চিকিৎসা

মনের ভেতর এবং বাইরের রহস্য