মাদক, ড্রাগ, নেশা- সর্বনাশা
মাদকের ক্ষয়ক্ষতিঃ
মাদক মানুষের যেসব ক্ষতি করে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে, নিজেকেই নিজের শত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। শরীর মন আত্মার মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি করে দেয়। তাদের চিন্তা , কথা, কাজের মধ্যে কোন মিল
থাকে না। নিজেকে ভুলে যায়, নিজের যত্ন নিতে ভুলে যায়। জীবিত থাকতে থাকতেই দ্রুত আজ্রাইলকে ডেকে নিয়ে চলে আসে।
ছবি:১ দেখুন কত দ্রুত নেশা
মানুষকে চুষে নিঃশেষ করে দেয়।
মাদক মানুষের যেসব ক্ষতি করে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে, নিজেকেই নিজের শত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। শরীর মন আত্মার মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি করে দেয়। তাদের চিন্তা
পৃথিবীতে বড় দুটো সুখ আছে যা শরীর দিয়ে আহরন করতে হয়।
এক,
খাবার খাওয়ার সুখ,
দুই,
যৌন ক্রিয়া করার সুখ ।
মাদকসেবীদের এই দুই সুখ নেয়ার
ক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। মাদক মানুষের আরও যেসব ক্ষমতা কেড়ে নেয় সেগুলো হল
মনোযোগ দিয়ে কাজ করার ক্ষমতা এবং টাকা উপার্জন করার ক্ষমতা। নেশা মানুষের এই দুই
ক্ষমতাকেই ধ্বংস করে ফেলে।
একজন নেশাগ্রস্থ মানুষ সুস্থভাবে
চিন্তা করতে পারে না, ধৈর্য ধরতে পারে না, কাজে লেগে থাকতে পারে না তাই তাকে দিয়ে
কোন কাজ সমাধান করা যায় না। নেশা দ্রব্যের উপর নির্ভরশীল ব্যাক্তির চিন্তার জগত
জুড়ে থাকে পরবর্তী নেশার ডোজের কথা। কখন ,
কিভাবে জোগাড় হবে এই চিন্তায় সে বিভোর থাকে। নেশার গল্প ছাড়া আর অন্য সব
গল্প তার কাছে অর্থহীন বলে মনে হয়। সে নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকলেও মৃত মানুষের মতই
অকার্যকর হয়ে যায়।
মানসিক বা অদৃশ্য ক্ষতিঃ
মাদক মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক
চিন্তার জগতকে বদলে অস্বাভাবিক, অলিক, অসুস্থ করে দেয়।
নেশার রাসায়ানিক পদার্থগুলো
মস্তিস্কের রসায়নকে বদলে দেয়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়াই আমরা যখন কোন ভাল কাজ করি
মস্তিষ্ক থেকে সুখের হরমোন নিঃসৃত হয়। আবার যখন কোন মন্দ কাজ করি তখন অন্য প্রকার
হরমোন নিঃসৃত হয় আমরা কষ্ট পায়। যাকে বিবেক বলে, এসব প্রতিক্রিয়ার কারনে আমরা কোন মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকি।
এভাবেই সমাজ, দেশের নিয়ম, আইন কানুন গুলো তৈরি হয় , বেশিরভাগ মানুষ এগুলো মেনে চলে সুখে শান্তিতে বসবাস করে। কিন্তু যারা নেশা
করে তাদের মস্তিস্কের সুস্থ বন্ধনগুলোকে মাদক বদলে দেয়। সত্য, সুন্দর , সুস্থতা তার কাছে অসহ্য আর
অসুস্থ মিথ্যা তার কাছে সুন্দর বলে মনে হয়।
মাদক যখন মস্তিস্কের সব রসায়নকে বদলে
ফেলে তখন সে নেশাদ্রব্য ছাড়া আর কোন কিছু চিন্তা করতে পারে না। চুরি , ছিনতাই ,
ডাকাতি , ধর্ষণ ইত্যাদি সব অপকর্মগুলো মাদক সেবীদের কাছে আর অস্বাভাবিক কোন কাজ বলে মনে হয়
না।
এভাবেই সমাজ, দেশের নিয়ম, আইন কানুন গুলো তৈরি হয়
তাই স্বাভাবিকভাবেই এই নেশাগ্রস্থ মানুষের সাথে আর কোন মানুষ
সম্পর্ক করতে চায় না, ব্যবসা করতে চায় না,
কোনরুপ লেনদেন করতে চায় না!
কিন্তু কেন ?
এবার আপনি বলেন নেশাগ্রস্থ
মানুষের সাথে আপনি কেন সম্পর্ক স্থাপন
করতে চান না?
আপনার বোন কিংবা আপনার মেয়েকে কি
আপনি কোন নেশাগ্রস্থ ব্যাক্তির সাথে বিয়ে দেবেন ? কেন দেবেন না?
আমার উত্তরের সাথে আপনার উত্তর
নাও মিলতে পারে। কিন্তু আপনি যে আপনার
প্রিয়জনকে নেশায় আক্রান্ত ব্যাক্তির হাতে তুলে দেবেন না, এটা নিশ্চিত।
উত্তরটা হচ্ছে, নেশায় আক্রান্ত ব্যাক্তির দেয়ার
ক্ষমতা হারিয়ে যায়, সে চারপাশ থেকে কেবল নিয়ে
উদরপূর্তি করতে থাকে। সে শুধু ভোক্তা হয়ে উঠে।
সে তার সুখ , শান্তি নেশার উপায়
উপকরন নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকে যে । অন্য কেউ পেল কি পেল না, সেই সম্পর্কে কোন
ভ্রুক্ষেপ তার থাকে না। দৈনন্দিন প্রতিটি কাজ তার কাছে পাহাড় কাটার মতই কষ্টকর বলে
মনে হয়, পৃথিবীর সব মানুষকে স্থুল বুদ্ধির বলে ভাবতে শুরু করে।
·
দিন দিন ভাল এবং মন্দের পার্থক্য করার সামর্থ্য
হারাতে থাকে
·
কে বন্ধু আর
কে শত্রু চিনতে ভুল করে
·
নিজের
দুরাবস্থা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে বের করতে পারে না।
·
শেষে নিজেই
নিজেকে ধ্বংস করে ফেলে। The end of life.
তাহলে এহেন মানুষের সাথে কোন
ভরসায় আপনি আপনার প্রিয়জনকে তুলে দেবেন?
জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে নেয়া
এবং দেয়ার মাধ্যমে একটি সুস্থ সম্পর্কের তৈরি হয়। মানুষের জীবনে
দেনা-পাওনার এই সম্পর্ক মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে। একজন নেশাগ্রস্থ ব্যাক্তির অন্য
মানুষকে দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে যায় , সে শুধু ভোগ করতে চায়। ভোগে বাধাগ্রস্থ হলে সে
উন্মাদ হয়ে যায় , নিজের জন্মদানকারী বাবা-মায়ের মারধোর করতে ছাড়ে না। আর যার কাছে
নিজের আপন বাবা-মা নিরাপদ না, সে আর কারো জন্যই নিরাপদ থাকে না।
আত্মিক বা আধ্যাত্মিক ক্ষতিঃ
স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিস্ক তার
কাজ কর্ম গুলোকে গুছিয়ে নেয়, প্রয়জনিয় তথ্য রেখে বাকি তথ্যগুলোকে মুছে ফেলে।
শারীরিক এবং মানসিক সব রকম চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করে আমাদের ভারসাম্য করে রাখে
স্বপ্ন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পথ চলতে মনে যে অপূর্ণ বাসনা তৈরি হয়; তার অনেকটায় পূর্ণ হয় স্বপ্ন দেখার মাধ্যমে। ধনীরা দিনের বেলা ইচ্ছামত খায়, যা ইচ্ছা তাই করে
, যেখানে ইচ্ছা সেখানে বেড়াতে যায় কিন্তু
রাতে আরামের ঘুম ঘুমাতে পারে না অন্যদিকে
গরীব মানুষেরা দিনের বেলা কষ্ট করে এবং রাতে গাড় ঘুমের স্বপ্ন দেখে সুখ পায়।
স্রষ্টা বাস্তবতা এবং স্বপ্নকে এভাবে বণ্টন করে পৃথিবীতে মোটামুটি ন্যায়বিচার
প্রতিষ্ঠা করে। অবশিষ্ট ন্যায়বিচার পরকালে করার জন্য রেখে দেয়। পৃথিবীতে সব মানুষ সব দিক দিয়ে সুখী হয় না
কিন্তু মনের অপূর্ণতা পূর্ণ করে নেয় স্বপ্নের মাধ্যমে।
স্বপ্নের মাধ্যমে এসব প্রক্রিয়াগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য গভীর ঘুমের প্রয়োজন। নেশাগ্রস্থ ব্যাক্তি গভীরঘুমের তৃপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। আপাত ভাবে মনে হয় নেশা দ্রব্য ঘুম নিয়ে আসে কিন্তু ভাসা ভাসা ঘুম ছাড়া গাড় ঘুম নিয়ে আসে না। ফলাফল খাপছাড়া ঘুম, ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বপ্ন, ইত্যাদি নানান ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে তার রাত পার হয়।
স্বপ্নের মাধ্যমে এসব প্রক্রিয়াগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য গভীর ঘুমের প্রয়োজন। নেশাগ্রস্থ ব্যাক্তি গভীরঘুমের তৃপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। আপাত ভাবে মনে হয় নেশা দ্রব্য ঘুম নিয়ে আসে কিন্তু ভাসা ভাসা ঘুম ছাড়া গাড় ঘুম নিয়ে আসে না। ফলাফল খাপছাড়া ঘুম, ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বপ্ন, ইত্যাদি নানান ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে তার রাত পার হয়।
আধ্যাত্মিক জগতের অন্যতম আইন হচ্ছে আপনি পৃথিবীতে থাকাকালীন সময়ে নিদিষ্ট পরিমান,
পানি , খাবার , সুখ সম্পদ ভোগ করবেন। এখন সেই সুখ যদি কেউ অল্প সময়ে নেশাদ্রব্য গ্রহনের মাধ্যমে দ্রুত নিঃশেষ করে ফেলে তখন স্বাভাবিকভাবে দুঃখভোগ করা ছাড়া তার আর কোন উপাই থাকে না।
এইজন্য দেখা যায় নেশাগ্রস্থ ব্যাক্তির গড়
আয়ু ৪১ অথচ একজন স্বাভাবিক মানুষের
আয়ুস্কাল ৭৮ বছর।
অর্থাৎ তারা সাধারন মানুষের
তুলনায় আয়ু কমে অর্ধেক হয়ে যায় নেশাগ্রস্থ
ব্যাক্তির। তাদের বাকি অর্ধেক জীবন শুধু হারিয়ে যায়। সময়, সম্পদ,
আয়ু, বুদ্ধিমত্তার কি নিদারুন অপচয়।
একটা মানুষ যখন নিজের শরীর, মন
এবং আত্মিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তখন ধীরে ধীরে সে পৃথিবীতে বসবাস করার অনুপযোগী
হয়ে যায়। হয় সে মাদকের অতিরিক্তি ডোজের কারনে মরে যায় নয়তো আজ্রাইলের হাতে নিজেকে সোপে দেয়!
এখন পছন্দ আপনার মাদকমুক্ত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকবেন না অসুস্থ, কুৎসিত , একাকী মৃত্যুবরণ করবেন? আপনার মধ্যে যদি কোনরূপ
মাদক নেয়ার প্রবনতা থেকে থাকে এবং আপনি এ থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে নেশার ফাঁদ থেকে মুক্তির আধ্যাত্মিকচিকিৎসা প্রবন্ধে উল্লেখিত ব্যবস্থাপত্রগুলো গ্রহন করেন। আশা করা যায় দ্রুত
আপনি এ থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।
এখন পছন্দ আপনার মাদকমুক্ত হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকবেন না অসুস্থ, কুৎসিত
যদি মনে হয় আপনি নেশার কবল থেকে
একা একা কোন ভাবেই বের হতে পারছেন না তাহলে দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহন করুন।
Comments
Post a Comment