শরীরের ভেতর এবং বাইরের রহস্য
আমি কে? আমি মানে কি? আমার শরীর ,
মন , নাকি আত্মা? প্রকৃত আমির অস্তিত্ব কোথায় ?
শরীর মন আত্মার নামটা শুনেই বুঝতে পারছেন এগুলো আমাদের কত পরিচিত শব্দ! আমরা সবাই একটি করে শরীর মন এবং আত্মার অধিকারী। আপনি নাস্তিকও যদি হয়ে থাকেন তাহলে আমি নিশ্চিত শরীর , মন এবং আত্মার আলোচনায় আপনি এমন কিছু তথ্য, জ্ঞান খুঁজে পাবেন যা আপনাকে নতুনভাবে ভাবতে সেখাবে। আপনারা দেখতে পাবেন আমাদের জানা জগতের মাঝে কত অচেনা তথ্য বা জ্ঞান লুকিয়ে আছে! সেই সব অজানা কিছু বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করবো শরীর, মন আত্মা বিষয়ক সিরিজ আলোচনায়। তবে এখানে শুধু শরীর বিষয়ে কথা বলব- পর্যায়ক্রমে মন এবং আত্মা নিয়ে আলোচনা করবো!
লক্ষ্যঃ
মানুষের জীবনের নানান সমস্যার গিট খুলতে এবং জীবনে নতুন উদ্যম
ও গতি সৃষ্টি করতে সাহায্য করা । মানুষকে
নিজের অন্তর্দৃষ্টির সাথে পরিচয় করে দেয়া এবং যে কোন
সমস্যার সবচেয়ে
সুন্দর সমাধান খুঁজে
বের করতে অনুপ্রানিত করা।
শরীর কি?
পাঁচটা ইন্দ্রিয় সাহায্যে যে সত্তার অস্তিত্ব অনুভব করি সেটাই শরীর। আমাদের
মস্তিস্কে যত রকম তথ্য আছে সবকিছু এই পাঁচ ইন্দ্রিয় চোখ, কান , নাক, মুখ এবং ত্বক এর
মাধ্যমেই সংগ্রহ করেছি।
শরীরের সাধারন বৈশিষ্ট্যঃ
১। শরীরের একটি কাঠামো থাকে
২। একই সময়ে ২টি স্থানে থাকতে পারে না।
৩। মানুষের শরীরের সর্বচ্চ গতি
ঘণ্টায় ২৭ মাইল। যা মন এবং আত্মার গতির তুলনায় কিছুই না ।
৪। শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য খাদ্য গ্রহন করতে বাধ্য। যেহেতু খাদ্য ছাড়া মানুষ সুস্থ থাকে না এবং বাঁচতে পারে না তাই সবকিছু সে দ্রুত পেতে চায়।
তাই তাড়াহুড়া করার প্রবনতা মানুষের শরীরের চাহিদা থেকেই তৈরি হয়।
৫। শরীরকে
জেলখানায় আটকে রাখা যায়
৬। শারীরের
জৈবিক ক্ষুধা নিবারনের জন্য খাদ্য এবং
অন্য একটা শরীরের প্রয়জন হয়।
৭। আমাদের শরীরে
কম বেশি ৬০ টি মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়। এক কথায় শরীরকে ক্যামিক্যালের বস্তাও বলা
যায়। শরীরে যে পরিমান কার্বন আছে তা দিয়ে ১০ হাজার পেন্সিল বানিয়ে ফেলতে পারবেন!
৮। শরীরকে স্থায়ী
একটা কাঠামো মনে হলেও, এর সবকিছু প্রতিনিয়ত বদলায়। চামড়া – ২৭ দিনে, জিহ্বা-
১৫ দিনে , পাকস্থলী- ২-৩ সপ্তহে
অর্থাৎ আমরা এমন এক ঘরে বাস করি যার ছাদ, মেঝে, ফার্নিচার সবকিছু দ্রুত সময়ের সাথে
বদলে যায়।
৯। জিহ্বা টক ,
মিষ্টি, ঝাল এবং অন্যান্য ৯০০০ স্বাদ নিতে
পারে, নাক ১০০০,০০০,০০০,০০০ ( এক ট্রিলিয়ন) গন্ধ নিতে পারে। কান ২০-২০০০০ হার্জ
রেঞ্জের শব্দ শুনতে পারে, চামড়ার প্রতিটি রোমকুপ antena মত কাজ করে।
১০। ১৭০ কিলোমিটার
ঝড়ের বেগে আপনার শরীরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খবর পৌঁছে যায়।
১১। আপনার লিভার
বা যকৃত একাই ৫০০ টিরও বেশি কাজ করে , তার মধ্যে পিত্ত উৎপাদন করা , শরীরের বিষ
বিনষ্ট করা , রক্তের মৃত লোহিত কোষগুলোকে দেহ থেকে বের করে দেয়া ইত্যাদি। শরীরের
ভেতরে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রমী অঙ্গ এটাই।
১২। আপনার শরীরের
সব অঙ্গ নিজেই নিজেকে মেরামত করতে পারে শুধু দাঁত ছাড়া। কারন দাঁতের এনামেলে কোন
জীবন্ত টিস্যু থাকে না।
১৩। বর্তমান পৃথিবীতে ৭৫০ কোটি
মানুষ থাকলেও প্রত্যেকের আঙ্গুলের ছাপ, চোখের রেটিনা এবং জিহ্বার ছাপ আলাদা।
১৪। আপনার শরীরে কোথাও আগুন জলে না তবুও তাপ
বের হয়। শরীরের মাত্র ৩০ মিনিটের তাপ দিয়ে ২ লিটার পানিকে ফুটিয়ে ফেলা সম্ভব।
১৫। মানুষ বিভিন্ন
পন্থায় আত্মহত্যা করলেও নিজের হাতে কখনও নিজেকে হত্যা করতে পারে না। মন এবং আত্মা একজোট হয়ে শরীরের সব নিয়ন্ত্রণ
নিয়ে নেয় , আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত
বাতিল করে শরীরকে রক্ষা করে।
১৬। আপনার দেহের প্রতি বর্গ
ইঞ্চিতে ৩ কোটি বিশ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া
বসবাস করে । সারা দেহে যতগুলো ব্যাকটেরিয়া আছে তা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার কয়েক
শত গুন বেশি।
এদের বেশির ভাগ উপকারি এবং কিছু ক্ষতিকারক । আপনার ইচ্ছা, অবসাদ,
গায়ের গন্ধ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা , এবং শারীরিক ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যক্ষ এবং পরক্ষ
ভাবে কাজ করে এসব ব্যাকটেরিয়া। এবং মৃত্যুর পর এই ব্যাকটেরিয়াগুলো গলিয়ে ,
পচিয়ে ফেলার জন্য দায়ী। এসব ব্যাকটেরিয়াগুলোকে আপনি কত যত্নে রাখছেন; সাবান , শ্যাম্পু দিচ্ছেন এবং পুরো শরীরটা ছেড়ে দিচ্ছেন বসবাস করার জন্য আর
এরাই কিনা আপনাকে মানে আপনার শরীরটাকে খেয়ে ফেলবে।
শরীরের পোস্টমর্টেমঃ
শরীর সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং
নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা শরীরকে দৃশ্য , অদৃশ্য এবং আধ্যাত্মিক অংশে আলাদা
আলাদা ভাবে ভাগ করেছি।
দৃশ্যমান অংশ ঃ
যে শরীরটা আমরা খালি চোখে দেখতে পায় সেটাই হচ্ছে দৃশ্যমান অংশ । চোখ, মুখ , নাক , কান , হাত , পা চামড়া মধ্যেই আমাদের দেখা
শরীর সীমাবদ্ধ। তবে এর ভেতরেও আরও অনেক অঙ্গ
প্রত্যঙ্গ আছে। ৯৯% মানুষ তার জীবন দশায় এই অঙ্গগুলো দেখার সৌভাগ্য হয় না। একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে লক্ষণীয় সেটা হল এসব অঙ্গগুলো তারা না দেখেই বিশ্বাস করে যায়
এগুলো সব ঠিক ঠাক আছে।
যে শরীরটা আমরা খালি চোখে দেখতে পায় সেটাই হচ্ছে দৃশ্যমান অংশ । চোখ, মুখ
ছবিঃ শরীরের ভেতরের অঙ্গের ছবি
অদৃশ্য অংশঃ
শরীরের যে অংশগুলো খালি চোখে দেখতে পায় না কিন্তু এর কার্যক্রমের ফলাফল অনুভব করি সেগুলোই শরীরের অদৃশ্য অংশ। উদাহরন হিসেবে বলা যায় বিভিন্ন অণুজীব , রক্তের কনিকার
কথা। এগুলোর প্রধান প্রধান কাজগুলোর মধ্যে আছে ঃ
খাদ্য হজম প্রক্রিয়াই সাহায্য
করা , দেহকে রোগ বালাই মুক্ত রাখা
ইত্যাদি। আমাদের বাইরের শরীরটা ঘুম বা বিশ্রাম নিলেও ভেতরের শরীর কিন্তু এক
মুহূর্তের জন্য বিশ্রাম নিতে পারে না। শুধু একবার চিন্তা করে দেখেন আমাদের হার্ট
যদি রক্ত পাম্প করা ছেড়ে দায়, কিংবা ফুসফুস বাতাস গ্রহন করতে ভুলে যায় তাহলে কি
অবস্থা হবে আমাদের। শরীরকে টিকিয়ে রাখার
জন্য ৯৫% কাজ হয় আমাদের দৃষ্টির অগচরে।
শরীরের যে অংশগুলো খালি চোখে দেখতে পায় না কিন্তু এর কার্যক্রমের ফলাফল অনুভব করি সেগুলোই শরীরের অদৃশ্য অংশ। উদাহরন হিসেবে বলা যায় বিভিন্ন অণুজীব
আধ্যাত্মিক অংশঃ
১। যে অদৃশ্য বন্ধনে আমাদের শরীর অন্য সব প্রাণীর
সাথে যুক্ত । যেমন পানি থেকে সকল জীবন্ত প্রাণী এবং উদ্ভিদের সৃষ্টি । আর আমাদের
শরীরের ৭৫% হচ্ছে পানি।
২। আরও আছে বন্ধন
বানরের সাথে আমাদের ডিএনএর মিল ৯৭.৫% , একটি কলার সাথে ৬০% , বেড়ালের সাথে
৯০% , কুকুরের সাথে ৮২% , গরুর সাথে ৮০% । অন্য মানুষের
সাথে ৯৯.৯৯%, বাকি ০.০১% এর পার্থক্যের কারনে গায়ের রঙ, চুল, উচ্চতা ভিন্ন হয়ে
থাকে।
৩।
চিত্র ঃ শুক্রাণুর গন্তব্য ডিম্বাণু, অস্তিত্বের জন্য প্রথম যুদ্ধ
পৃথিবীতে যখন আপনার আগমন ঘটে তখন ২০ কোটি শুক্রাণু অর্থাৎ ২০ কোটি ভাইয়ের সাথে যুদ্ধ করে বিজয়ী বেশে এই পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন । পিতার শরীরে শুক্রাণু তৈরিতে, না পিতার কোন হাত ছিল, না আপনার কোন অবদান ছিল কিন্তু তবুও আপনার জন্মের ভীত রচিত হয়েছিল। একটা বিষয় নিশ্চিত যে , জন্মের সেই ঘটনা কোন এক্সিডেন্ট ছিল না, সেটা ছিল নিখুঁত পরিকল্পনার অংশ । আপনি ছিলেন পূর্ণ আধ্যাত্মিকতার নিয়ন্ত্রনে । জন্মের পর থেকে আপনি যত শরীর এবং মনের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে শুরু করেছেন তত আধ্যাত্মিক অংশটাকে ভুলে গেছেন। পুনরায় আবার যখন আপনি বৃদ্ধ হয়ে জান , যখন শরীর এবং মনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে তখন একটু একটু করে আধ্যাত্মিকতা ফিরে আসে।
শরীরের পোস্টমর্টেমের এবং সার্বিক বিচার
বিশ্লেষণের পর আমরা কিছু
সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি সেগুলো হল ঃ
১। শরীরের দৃশ্যমান অংশের
বাইরে অনেক বড় একটা অংশ আছে।
২। বাইরের শরীরের কোন অঙ্গহানি
হলেও বেঁচে থাকা যায়, কিন্তু ভেতরের অংশে কোন একটা অঙ্গ না থাকলে বেঁচে থাকা যায়
না। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় , যা দেখা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ যা
আমরা দেখতে পাই না।
৩। অন্য মানুষকে ঘৃণা নয় ভালবাসতে
শিখুন। যাকে আপনি ঘৃণা করছেন , অবহেলা করছেন, ক্ষমতা আছে বলে অত্যাচার করছেন তার
সাথে আপনার মিল ৯৯.৯৯% আর দুজনের
সৃষ্টিকর্তাই কিন্তু এক! আপনার কাজের জন্য অবশ্যই আপনাকে একদিন জবাবদিহি করতে হবে!
৪। আপনার জীবন
আপনার শরীর পৃথিবীতে স্রষ্টার সবচেয়ে মূল্যবান উপহার, একে যত্ন নিন। নিজের এবং
অন্যের প্রয়োজনে একে কাজে লাগান।
Comments
Post a Comment