নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মনোবিজ্ঞান
সময়ের
সাথে দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে ।
যদিও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার
দিকে তাকালেই এগিয়ে যাওয়ার তৎপরতা চোখে পড়ে। তবুও অর্থনীতি, রণনীতি , রাজনীতি, কূটনীতি
আরও যত সব নীতি আছে, সবতাতেই লেগেছে অগ্রগতির
হাওয়া।উন্নতিরসাথে সাথে পৃথিবী মুখোমুখি হচ্ছে নতুন সব চ্যালেঞ্জের , যার বেশিরভাগ মানুষের
সৃষ্ট এবং বাদবাকি প্রাকৃতির। যেমনঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো নিত্যনতুন চিকিৎসা ব্যবস্থা সাথে নতুন ঔষধের নাম
। আবিষ্কৃত চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে সাথে রোগ
জীবাণুও নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, অচেনা সব রোগেরসৃষ্টি করছে। অর্থাৎ মানুষ এবং তার প্রতিপক্ষ দুজনেই সমানে সমান! এগিয়ে চলেছে তালে তাল মিলিয়ে। এই সবকিছুর অর্থ হচ্ছে আমাদের সম্মুখে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে যার নাম আগেকখনও
শোনা যায়নি যে সমস্যার অস্তিত্ব মানুষ কখনও কল্পনা করেনি। পৃথিবীতে একজন মানুষও এই
চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি না হয়ে দূরে থাকতে পারবে না। কোন না কোন ভাবেই প্রতিটি মানুষকে , তার অস্তিত্বকে ,
তার ভীতকে নাড়া দেবেই এইসব চ্যালেঞ্জ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নানাবিধ রোগ, প্রযুক্তির
ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স , পেশাগত ক্ষেত্রে যন্ত্র মানুষের জাইগা
দখল করে নিবে এবং নিচ্ছে। সামাজিক
ক্ষেত্রে একাকীত্ব, লাগামহীন প্রতিযোগিতা, মাদকের সহজলভ্যতা, মানসিক রোগ, বিকৃত
রুচি মানুষকে নতুন সমস্যার মুখোমুখি করে দিচ্ছে। অর্থাৎ মানুষ তার প্রতিটি পদক্ষেপ এক নতুন চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। কিছু মানুষ
এই চ্যালেঞ্জকে সমস্যা মনে করে এর নিচে চাপা পড়ে লেজেগোবরে অবস্থা করে ফেলবে আর
কিছু মানুষ এই চ্যালেঞ্জগুলোকে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত বানিয়ে রাতারাতি সফল, ধনী
এবং জনপ্রিয় হয়ে যাবে। উদাহরন হিসেবে বলা যায় একাকীত্বের যন্ত্রণার চ্যালেঞ্জকে পুঁজি করে
ফেসবুক বানিয়ে সফল মার্ক জুকার বার্গ,
মানুষের বাজার করার অলসতাকে পুঁজি করে সফল, আলীবাবা, অ্যামাজন , ইবে ইত্যাদি।
প্রশ্ন
হচ্ছে কারা এইসব সফল মানুষ? কেন হচ্ছে তারা সফল ? চিন্তা জগতে সাধারন মানুষের থেকে
এদের মিল এবং অমিলগুলো কোথায়? তাদের মনোযোগের বিষয়বস্তু কি ছিল যখন তারা অসফল এবং
সফল ছিল?
উত্তরটা
খুব সহজ তারা সবাই পড়ত। হয় তারা প্রাকৃতিক ভাবে মানুষ এবং চারপাশের পরিবেশকে পড়তে
পারত। নয়তো তারা বইয়ের পাতা থেকে তাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ করে নিত। আপনি প্রশ্ন
করতে পারেন কি পড়ব? হাজার হাজার কোটি কোটি বই কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়ব?
“Employ your time in improving yourself by
other men’s writings so that you shall come easily by what others have
labored hard for.”
- Socrates
আমার
দৃষ্টিতে মনোবিজ্ঞান এবং এ সম্পর্কিত বইগুলো হতে পারে সেরা বই। কিন্তু কেন? আমি একটু পরেই ব্যাখ্যা করবো কেন
আমি মনোবিজ্ঞান সম্পর্কিত বইগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
নিজেকে জানতেঃ
“Through pride we are ever deceiving
ourselves. But deep down below the surface of the average conscience a still,
small voice says to us, something is out of tune.”
— C. G. Jung
পৃথিবীর সবকিছু শুরু হয় নিজ থেকে তাই সবার আগে নিজেকে
জানা সবচেয়ে বেশি জরুরী।পৃথিবীতে জীবিত যে
কোন মানুষ , সে যতই ধনী , শিক্ষিত , সফল হোক না কেন । যখন সে দিনের কোন এক সময়
নিজের মুখোমুখি হয় , তখন নিজের সব সফলাতার
আড়ালে কিছু শূন্যতা গুলোকে চোখের সামনে ভাসতে
দেখে চলে আসে।একটু বেশি মনোযোগ দিয়ে দেখলে সেগুল বড় আর স্পষ্ট হয়। মনোবিজ্ঞানের
ভেতর দিয়ে প্রশিক্ষিত চোখে দেখলে খুলে যায় অন্তর্দৃষ্টি । প্রতিনিয়ত গবেষণার
সাহায্যে আমাদের ভেতরের শূন্যতার যথার্থ
মর্ম উপলব্ধি করতে এবং সেগুলো পূরণের
ব্যবস্থাপনা খুঁজে বের করতে সাহায্য করে মন সম্পর্কিত বিজ্ঞান। মানুষের প্রতিটি কাজ যেমন নিয়তের উপর নির্ভরশীল
। তেমনি মানুষের প্রতিটি সাফল্য তার মনোজগতের ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল।
মনোজগতের ব্যবস্থাপনা ঠিক হয়ে গেলে , বাহিরের জগতের সবকিছু আপনাআপনি সাজানো শৃঙ্খলায় সুন্দর ভাবে সজ্জিত হতে থাকে। এভারেস্টজয়ী
এডমন্ড হিলারি এ কারণেই বলেছেন,
আমরা পর্বত জয় করি না, জয় করি নিজেকে।
সম্পর্কের গড়ন এবং ভাঙ্গনঃ
সংসার থেকে শুরু করে সরকার পর্যন্ত সবখানেই চলে সম্পর্ক ভাঙ্গা গড়ার খেলা। এই খেলায় সেই
পারদর্শী হয়ে উঠে যে মানুষের মনোজগৎ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। সম্পর্কের কাঠামো , প্রেম, বিয়ে এবং আন্তঃ
সম্পর্কের গতিবিধি সম্পর্কে জানতে মনের বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান আপনার আশপাশের মানুষের আনন্দ , বিষণ্ণতা,
ভাললাগা , মন্দলাগা বিষয়ে এক নতুন দৃষ্টি ভঙ্গি দেবে। এছাড়াও Sextual intelligence, erotic intelligence সম্পর্কিত আলোচনাও বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে
অতিব জরুরী হয়ে উঠেছে!
মন খারাপ, বিষণ্ণতা, ড্রাগঃ
আজকাল মন খারাপ, বিষণ্ণতা, ড্রাগ, জীবনের
লক্ষ্যহীনতা , কোন কিছু ভাল না লাগা, সাধারন বিষয়ে পরিনত হয়েছে। মনবিজ্ঞান সম্পর্কিত
পড়াশোনায় আমরা জানতে পারবো কিভাবে আমাদের শরীর এবং মন কাজ করে । এর ফলে আমরা জটিল
জটিল সব মনের অসুখগুলোকে ধরতে পারবো, বুঝতে পারবো এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবো।
তথ্যের গাদি থেকে প্রজ্ঞাঃ
"Don't become a mere recorder of facts, but try
to penetrate the mystery of their origin."
— Ivan Pavlov
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া একটা অসাধারন বিষয়
কারন আপনি সেখানে একাডেমীক দক্ষতা অর্জন করে থাকেন। যার ফলে আপনি নিজের অভ্যন্তরে
এমন একটি ছাঁকনি তৈরি করেন; সেই কারনে মিডিয়া, সংবাদপত্র, কিংবা বইতে ছাপার অক্ষরে
লেখা সব কিছু আপনি বিশ্বাস করেন না। আপনার শিক্ষার দক্ষতার সাহায্যে ঠিকঠাক ধরে
ফেলেন কোন তথ্যটি অধিকতর বিশুদ্ধ, কোন তথ্যটিকে ফেলে দিতে হবে, কোন তথ্যটিকে মনের
মণিকোঠায় তুলে রাখবেন। বিশুদ্ধ এবং অশুদ্ধ তথ্য খুঁজে বের করার মানদণ্ড নিয়ে এই
অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে । গবেষণার নতুন অন্তর্দৃষ্টি মানুষের আচারনের চুল চেরা
বিশ্লেষণ করবে এবং তার সম্পর্কে ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস দেবে এবং প্রায় নির্ভুল সিদ্ধান্তগ্রহনে সাহায্য করবে।
পেশা হোক সমৃদ্ধঃ
“The pendulum of the mind oscillates between
sense and nonsense, not between right and wrong.”
— C. G. Jung
আপনি আপনার সহকর্মীকে আরও ভালভাবে জানতে পারবেন এবং
তার মন-মানসিকতা আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে পারার কারনে । তার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে
যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। নিঃসন্দেহে এই জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা আপনার পেশাগত জীবনে আপনার
প্রতিটি কাজ এবং সিদ্ধান্তে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
জটিল এবং কুটিল চিন্তা করার দক্ষতা অর্জনঃ
“It is the mark of an educated mind to be able to
entertain a thought without accepting it ”
কল্পনা করুন এমন একজন উকিল, ডাক্তার, সাংবাদিক
কিংবা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের কথা যিনি কুটিল বা জটিলভাবে চিন্তা করেন না! আপনি কি
তাদের পরামর্শ নেয়ার ঝুঁকি গ্রহন করবেন? ডাক্তার দেখাতে গেছেন , আপনি তাকে যা
বললেন শুধু তাই শুনে আপনাকে ঔষধ দিল । নিজে থেকে
কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলো না, আপনার
ওজন, রক্তচাপ, কোনকিছুই ধ্যাতব্যের মধ্যে আনল না। আপনার রোগকে সঠিক ভাবে নির্ণয়ের জন্য কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও যেতে বলল না। আপনি কি
সেই ডাক্তারের উপর বিশ্বাস রাখতে পারবেন? একই
কথা উকিল, সাংবাদিক, প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের ক্ষেত্রেও ঠিক একইভাবে প্রযোজ্য। মনোবিজ্ঞান মানুষকে কোন একটি ঘটনাকে লক্ষ-লক্ষ
দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা করতে প্রশিক্ষণ দেয়। তথ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণের ফলে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহন হয় সঠিক এবং
নির্ভরযোগ্য। যখন আপনার একটি ক্ষুরধার
মস্তিষ্ক থাকবে যেটা দ্রুত তথ্যের গভীরে জেতে পারে এবং ধূমধাম সিদ্ধান্তগ্রহন করতে
পারবেন , তখন আপনি সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে এবং যে কোন প্রকার চ্যালেঞ্জ অতিক্রম
করতে পারবেন। জীবনের সব সাফল্যের সিঁড়িতে থাকবেন সবার প্রথমে। জটিল এবং কুটিল
চিন্তার দক্ষতা আপনাকে ভবিষ্যতের হাজারো
সমস্যার মাঝেও উপরে তুলে রাখার গ্যারান্টি দেবে।
মস্তিষ্ক একটি শক্তিশালী হাতিয়ার , মনবিজ্ঞান সম্পর্কিত
পড়াশোনা সেই হাতিয়ারকে আরও ধারালো করে, জীবনের সব চ্যালেঞ্জের সামনে আপনাকে সুস্থির রাখে। আপনি ধিরে ধিরে
বুঝতে পারেন আমাদের মস্তিষ্ক এবং মন কিভাবে কাজ করে, কিভাবে সেই কাজ সমাজকে
প্রভাবিত করে । কুটিল এবং জটিল চিন্তা করার ক্ষমতা প্রতিটি পেশায় , যে কোন
সিদ্ধান্ত গ্রহনে আপনাকে প্রথম সারিতে অবস্থান নিশ্চিত করে ।
আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি , মনবিজ্ঞান সম্পর্কিত
জ্ঞান আমাকে লেখক হতে দারুন সাহায্য করেছে।
জীবনের ধারাবাহিকতায় অনেকবার গভীর সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হয়েছি, কিন্তু প্রতিবারই কোন
না কোনভাবে মুখে মাছ নিয়ে তীরে উঠে এসেছি।
এখন জীবনের প্রতিটি ঘটনার একটি ইতিবাচক দিক খুঁজে বের করতে পারি। যখনই কোন সমস্যার
সম্মুখীন হই তখনই আমার সময়, কাজকে গুছিয়ে নিয়ে এবং সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্তটি নিতে
পারি।
আসুন সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে মন সম্পর্কিত বিজ্ঞান
নিয়ে পড়াশোনা করি, জীবনের সব
চ্যালেঞ্জগুলিকে সমস্যা না ভেবে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত মনে করি। শুধু মনোরোগ নয় মনো
সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলি, গবেষণা করি এবং পৃষ্ঠপোষকতা করি।
মোঃ তৌহিদুর রহমান (রনি)
বিজ্ঞান এবং মন বিষয়ক সাংবাদিক।
Comments
Post a Comment